আগামী বছর গগনযান মিশনের মাধ্যমে তাদের মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠাতে চায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। প্রস্তুতিও চলছে জোরকদমে। মহাকাশচারীদের বলা হচ্ছে 'গগননট'। তাঁদের প্রশিক্ষণও প্রায় শেষ। মহাকাশে গগনযানকে ওড়ানোর অনুশীলন চলছে।
প্রশ্ন হল চন্দ্রযান-৩ কীভাবে গগনযানকে সাহায্য করছে? চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে লঞ্চ ভেহিকেল মডিউল অর্থাৎ LVM-3 (LVM-3) রকেট থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এই রকেটের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ গগনযানের জন্য ব্যবহার করা হবে। কারণ গগনযান এবং তাতে বসে থাকা মহাকাশচারীদের মহাকাশে ছেড়ে যেতে একটি ভারী রকেটের প্রয়োজন। ভারতের কাছে এর চেয়ে নির্ভরযোগ্য ভারী রকেট আর নেই।
LVM-3 এর সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ। চন্দ্রযান-৩ বহনকারী রকেটে নানা হিউম্যান রেটেড সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। হিউম্যান রেটেড সিস্টেম মানে একজন মানুষকে বহন করার সময় রকেট কেমন হওয়া উচিত, কতটা সুরক্ষা থাকা উচিত ইত্যাদি। মানুষ নিয়ে যাওয়ার সময় এতে সামান্য গোলমাল হলে আপনাআপনি রকেট থেমে যাবে অথবা গগনযান ক্যাপসুলটিকে দূরে ফেলে দেবে রকেট।
LVM-3 রকেটে সলিড স্ট্র্যাপ-অন মোটর (S200) দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রকেটে লাগানো L110 বিকাশ ইঞ্জিনটিও মানব বহনের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। L110 মানে রকেটের নীচের অংশ যার দু'দিকে স্ট্র্যাপ-অন ইঞ্জিন রয়েছে। ISRO গগনযানের আগে একাধিক মিশনে হিউম্যান রেটেড সিস্টেম এবং LVM-3 রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এই রকেটের সক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা পরীক্ষা চালিয়ে যাবে।
গগনযানের হিউম্যান রেটেড রকেটের সফল পরীক্ষা ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ বলেন,'আগেও বলা হয়েছে যে গগনযানের লঞ্চ ভেহিকেলের রেটিং প্রায় সম্পূর্ণ। এর প্রপালশন, সলিড, লিক্যুইড এবং ক্রায়োজেনিক মডিউলগুলির পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। রকেটের অন্যান্য অংশের পরীক্ষা চলছে। তা চলতে থাকবে যতক্ষণ না মানব বহনের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।'
হিউম্যান রেটেড রকেট কী?
যেমন স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেট। নাসার অ্যাপোলো মিশন বহনকারী স্যাটার্ন রকেটের মতো। এই ধরনের রকেট অনেক বড়, শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত হয়। যাতে মহাকাশে মানুষ যাওয়ার সময় কোনও সমস্যা না হয়। সামান্যতম গোলমাল হলেই মানববহনকারী যানকে বাইরে ফেলে দেয়। অন্যথায় ক্যাপসুল নিজেই রকেট থেকে আলাদা হয়ে যায়। নিরাপত্তা একাধিক ধাপ নিশ্চিত হওয়ার পর একটি রকেট মানব পাঠানোর যোগে্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ ওই রকেটে বসা কোনও ব্যক্তিই যেন কোনওভাবেই বিপদে না পড়ে। মহাকাশচারীদের উপগ্রহের জায়গায় স্থাপন করা হয়। অর্থাৎ রকেটের শীর্ষে।
এমন রকেট নিয়ে একজন মানুষ কতদূর যেতে পারে?
মানব রেটেড রকেটের মাধ্যমে মানুষ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, চাঁদ বা তার বাইরেও যেতে পারে। চ্যালেঞ্জার এবং কলম্বিয়া স্পেস শাটল দুর্ঘটনার পর নাসা রকেটের রেটিং শুরু করেছে। এর পরই নাসা হিউম্যান রেটেড স্পেসক্রাফ্ট বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে তৈরি করতে দেয়। নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের অধীনে ডেল্টা-৪ এবং অ্যাটলাস-৫ রকেট তৈরি হয়েছে। মহাকাশচারীরা এই যানে মহাকাশ স্টেশনে যান। বোয়িং কোম্পানিও এই কর্মসূচির আওতায় স্টাারলাইনার মহাকাশযান তৈরি করছে।