বাঙালির সাধের ‘রুপালি শস্য’ ইলিশ! সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পোলাও, ইলিশের পাতুরি, মালাইকারী — ভোজনরসিক বাঙালির কাছে ইলিশ মানেই ‘ভজ্য রুপো’! এখন ইলিশের আকাল চলছে।, তাই বাজারে যা আসছে, তারও দাম বেশ চড়া! ইলিশের জোগান এ বার বেশ কম। ইলিশ এখনও ৮৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে।
এ কথা হয়তো আমরা প্রায় সকলেই জানি যে, ইলিশ সমুদ্রের নোনা জলে বাস করে আর প্রজনন কালে, ডিম পাড়ার সময় মাস খানেক কাটায় নদীর মিঠা জলে। অর্থাৎ, ইলিশের বাড়-বৃদ্ধির জন্য সমুদ্র আর নদীর উপরই ভরসা করে থাকতে হবে।
তবে পুকুরের জলেও কি ইলিশ চাষ সম্ভব! শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তবে পুকুরের জলে ইলিশ চাষ করে হাতে নাতে প্রমাণ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের এক মৎস্যবিজ্ঞানী। দীর্ঘ চার বছরের গবেষণায় পেয়েছেন সাফল্যও।
দেখতে অবিকল নদী বা সমুদ্র থেকে ধরা ইলিশের মতো, স্বাদও খাসা! কিন্তু ওই ইলিশ সুন্দরবনের কাকদ্বীপের পুকুরের জলেই বাড়িয়েছেন বাঙালি মৎস্যবিজ্ঞানী দেবাশীষ দে ও তাঁর সহকারি গবেষক দল।
ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদের (ICAR) অধীনে কাকদ্বীপের পুকুরে এই গবেষণা চালান মৎস্যবিজ্ঞানী দেবাশীষ দে ও তাঁর গবেষক দল। গবেষণায় দেখা যায়, ২১ মাসে ইলিশের ওজন হয় প্রায় ৫০০ গ্রাম, লম্বায় ৩৩০ থেকে ৩৪৫ মিলিমিটার।
পুকুরের জলে কী করে সম্ভব হল ইলিশের চাষ! কাকদ্বীপের মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে কালনাগিনী নদী। নদীর নোনা জল পুকুরে ধরে হুইলারের সাহায্যে অক্সিজেন তৈরি করা হয়। তারপর সেখানে মাছের চারা ছাড়া হয়।
তবে প্রথমে পুকুরে ইলিশ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছিল না। মাছের খাবার নিয়েও সমস্যা হচ্ছিল। ইলিশের প্রধান খাবার হল, উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা। তারপর আরও বছর খানেকের গবেষণায় কৃত্রিমভাবে ইলিশের খাদ্যকণা তৈরি করেন গবেষকেরা। পর্যাপ্ত খাবার আর অনুকূল পরিবেশে এর পরেই মেলে সাফল্য।
পুকুরে চাষের ইলিশের পেটে ডিমও আসে। শুরু হয় পুরুষ মাছের শুক্র উৎপাদনের প্রক্রিয়া। এর পর পুকুরের জলেই ইলিশে সফল প্রজনন ঘটান বাঙালি মৎস্যবিজ্ঞানী ও গবেষকরা। ২০১২ সালে এই সাফল্যে ভর করেই বর্তমানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দুই বাংলায়। ভোজনরসিকদের পাতে ইলিশের পর্যাপ্ত জোগান দিতে এখনও নানা গবেষণা চলছে।