ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম রেল পরিবহণ ব্যবস্থাগুলির অন্যতম। প্রতিদিন ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষ যাতায়াতের জন্য ভারতীয় রেলের উপর নির্ভরশীল। রোজ ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেলপথে স্থানান্তরে পাঠানো হয়।
ভারতীয় রেলের আওতায় মোট ৭,৩২১টি স্টেশন রয়েছে। ভারতীয় রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ৬৭,৪১৫ কিলোমিটারেরও বেশি। ভারতীয় রেলে রয়েছে আড়াই লক্ষেরও বেশি পণ্য পরিবাহী ওয়াগন, ৫৫ হাজারেরও বেশি কোচ ও ১২ হাজারেরও বেশি লোকোমোটিভ।
ট্রেনের কান ফাটানো হর্ন শুনে অনেকেই আঁতকে ওঠেন, দু’কান চেপে ধরেন। কিন্তু জানেন ট্রেনে ১১ রকমের হর্ন বাজানো হয়? শুধু তাই নয়, এই ১১ রকমের হর্নের প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা সঙ্কেত বহন করে।
একেক সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজন মতো একেক রকমের বার্তা দেওয়ার জন্য ট্রেনের চালক এই ১১ রকমের হর্ন বাজান। যেমন, যাত্রীদের সতর্ক করার জন্য এক রকম হর্ন, গার্ডকে সতর্ক করার জন্য আর এক রকমের হর্ন বাজানো হয়। গার্ডকে পৃথক পৃথক বার্তা দেওয়ার জন্যেও আলাদা আলাদা হর্ন বাজানো হয়। চলুন এবার ট্রেনের ১১ রকমের হর্ন আর তার বিভিন্ন সঙ্কেত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক...
ওয়ান শর্ট হর্ন: এটি মূলত খুব অল্প সময়ের জন্য একবারই বাজানো হয়। যাত্রা শুরুর আগে ট্রেন পরিষ্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ডে যাবার ক্ষেত্রে এই হর্নটি বাজানো হয়। হাওড়া, শিয়ালদা, আসানসোল, বর্ধমান ইত্যাদি বড় স্টেশনে হর্ন শোনা যায়।
টু শর্ট হর্ন: এটি খুব অল্প সময়ের জন্য পরপর দুই বার বাজানো হয়। ট্রেন ছাড়ার সময় মোটরমেন, গার্ডের কাছ থেকে সিগন্যালের জন্য এই হর্ন বাজানো হয়। যে কোনও স্টেশনে গেলেই এই হর্ন শোনা যায়।
থ্রি শর্ট হর্ন: এই হর্ন খুব একটা শোনা যায় না। এটি খুব অল্প সময়ের জন্য পরপর তিনটি ছোট হর্ন বাজানো হয় মূলত বিপদ সঙ্কেত জানাতে। এই হর্ন বাজলে গার্ড বুঝতে পারেন চালক ট্রেন থামাতে পারছেন না। গার্ডকে ভ্যাকিউম ব্রেক ব্যবহারের জন্য এই হর্ন বাজানো হয়।
ফোর শর্ট হর্ন: ট্রেনের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিপদ সঙ্কেত বোঝাতে চালক খুব অল্প সময়ের জন্য পরপর চারবার ছোট ছোট হর্ন বাজান। ওয়ান লং, ওয়ান শর্ট হর্ন: ট্রেন চালু করার আগে এই ধরনের হর্ন বাজানো হয়। এ ক্ষেত্রে একবার লম্বা হর্ন বাজানোর পরই একটি ছোট্ট হর্ন বাজানো হয়। এই হর্ন শুনে গার্ড ব্রেক পাইপ সিস্টেম চালু করার প্রস্তুতি নেন।
টু লং, টু শর্ট হর্ন: এই ধরনের হর্ন বাজিয়ে ট্রেনের চালক মূলত গার্ডকে ইঞ্জিন নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রে পর পর দু’বার বড় হর্ন বাজিয়েই দু’বার ছোট ছোট হর্ন বাজানো হয়। লং হর্ন: একটানা লম্বা হর্ন মূলত দ্রুতগামী এক্সপ্রেস ট্রেনেই বেশি বাজানো হয়। এছাড়াও গ্যালোপিং লোকাল ট্রেন যে স্টেশনে থামে না, সেখানে এই ধরনের হর্ন বাজানো হয়।
টু হর্ন, টু পজ: ট্রেন যখন কোনও রেল ক্রসিং অতিক্রম করে, তখন এই ধরনের টু হর্ন, টু পজ হর্ন বাজানো হয়। এ ক্ষেত্রে থেমে থেমে দুবার ছোট ছোট হর্ন বাজানো হয়। টু লং, ওয়ান শর্ট হর্ন: মোটর ম্যান ট্রেনের ট্রাক পরিবর্তন করার সময় এই ধরনের হর্ন বাজান ট্রেনের চালককে জানানোর জন্য।
টু শর্ট হর্ন, ওয়ান লং হর্ন: কোনও যাত্রী যখন কোনও খুব জরুরি প্রয়োজনে চেন টেনে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন তখন এই ধরনের হর্ন বাজে। অনেক সময় গার্ড যখন কোনও বিশেষ প্রয়োজনে ভ্যাকিউম ব্রেক ব্যবহার করেন, তখনও এই ধরনের হর্ন বাজানো হয়।
সিক্স শর্ট হর্ন: এই ধরনের হর্ন সাধারণত ট্রেনের চালক জরুরি পরিস্থিতিতে বাজান। কোনও বড়োসড়ো বিপদ ঘটলে চালক পরপর ছয়বার হর্ন বাজান। ট্রেন কোনও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে আটকে পড়লে যাত্রী এবং গার্ডকে সতর্ক করার জন্য এই ধরনের হর্ন বাজানো হয়।