অবসরের পর কোটিপতি হয়ে যাবেন। ১ কোটি টাকা থাকবে। তারপর পায়ের উপর পা তুলে আরামে রিটায়ারমেন্ট লাইফ কাটাবেন। তাই এখন থেকে প্ল্যান শুরু করে দিয়েছেন।
এই যদি আপনার প্ল্যান হয়, তাহলে বাস্তবটা জেনে রাখা এখনই জরুরি। সেটি হল, অবসরের পর ১ কোটি টাকায় জলও গরম হবে না!
২০৪৫ সালে যাঁরা অবসর নেবেন, তাঁদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। যাঁরা ভাবছেন, ২০৪৫ সালে অবসর নিলে ১ কোটি টাকা যথেষ্ট। আরামে কেটে যাবে বাকি জীবন, তাঁদের এখনই সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
চেন্নাইয়ের অডিট এক্সপার্ট বি গোবিন্দা রাজুর কথায়, 'আমরা টাকার অঙ্কটা দেখি। দীর্ঘায়ু ও মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টা নিয়ে ভাবি না। সমস্যা এখানেই।' ভারতীয়দের বার্ধক্যে প্রবল অর্থের সঙ্কটের সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি।
একেবারে অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দিলেন, ২০৪৫ সালে অবসর নিলে ১ কোটি টাকা তুচ্ছ। বুঝে নেওয়া যাক সহজ অঙ্কটা। আপনি যদি ৬০ বছর বয়সে অবসর নেন এবং হাতে থাকে ১ কোটি টাকা, তাহলে প্রথম দেখায় সেটা যথেষ্ট মনে হতেই পারে। কিন্তু একটু হিসেব করলে বোঝা যায়, আসল সমস্যাটা কোথায়।
ধরা যাক, অবসরের পরে আপনি ৮৫ বছর পর্যন্ত বাঁচবেন। তাহলে ২৫ বছর সময় ধরে এই টাকায় চলতে হবে। আর কোনও রোজগার নেই। বছরে ১২ মাস ধরে হিসেব করলে, প্রতি মাসে আপনার খরচ চালাতে লাগবে প্রায় ৩৩,০০০ টাকা। এর বেশিও লাগতে পারে। একটা সাধারণ হিসেব ধরে নেওয়া যাক।
শুনতে বেশ ঠিকঠাক লাগছে, তাই তো? কিন্তু সমস্যার নাম ‘মূল্যবৃদ্ধি’ বা ইনফ্লেশন। আজ ৩৩,০০০ টাকায় যেটা কিনতে পারেন, ১০ বছর পর সেই জিনিসের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। আপনার অবসরের পরে আপনার আয় থামতে পারে, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির হার তো থামবে না।
ধরা যাক, গড় মূল্যবৃদ্ধির হার বছরে ৬ শতাংশ। তাহলে ১০ বছর পর, আপনার মাসিক ৩৩,০০০ টাকার ক্রয়ক্ষমতা নেমে যাবে প্রায় ১৮,০০০ টাকায়। মানে, তখন এই টাকায় আপনি এত কিছুই আর কিনতে পারবেন না।
আর ২৫ বছর পর, যখন আপনার বয়স ৮৫, তখন এই ৩৩,০০০ টাকার বাস্তব মূল্য নেমে যাবে মাত্র ৮,০০০ টাকার কাছাকাছি। যা আজকের দিনে অনেকের মাসিক বাজার আর ফ্ল্যাটের মেইনটেনেন্স খরচও নয়।
তাই অবসর পরিকল্পনায় শুধু কত টাকা জমিয়েছেন, তাই নয়, ভবিষ্যতের টাকার মূল্য কেমন থাকবে, সেটাও ভাবতে হবে। না হলে শেষ বয়সে আপনি হাতে টাকা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সঙ্কটে পড়তে পারেন। টাকার অঙ্কের চেয়েও জোর দিন মুদ্রাস্ফীতি ও দীর্ঘায়ুর বিষয়টিতে।