ভারতে অ্যাপলের আইফোন অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট পরিচালনাকারী ফক্সকন কোম্পানি ফ্যাক্টরিতে বিবাহিত মহিলাদের চাকরি না দেওয়ার ঘটনায় বড় ধাক্কা খেল। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর পদক্ষেপ করেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক তামিলনাড়ুর শ্রম বিভাগের কাছে বিষয়টির সম্পূর্ণ প্রতিবেদন চেয়েছে। সমান পারিশ্রমিক আইনের উল্লেখ করে শ্রম মন্ত্রক এই রিপোর্ট তলব করেছে।
রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব
বুধবার শ্রম মন্ত্রক বলেছে যে তামিলনাড়ুর ফক্সকন ইন্ডিয়া অ্যাপল আইফোন প্ল্যান্টে বিবাহিত মহিলাদের চাকরির অফারদেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মিডিয়া রিপোর্টে। এই প্রতিবেদনগুলিতে দেওয়া তথ্যের বিষয়ে, মন্ত্রক অবিলম্বে তামিলনাড়ু সরকারের শ্রম দফতর থেকে একটি বিশদ রিপোর্ট চাইছে। বুধবার মন্ত্রক উল্লেখ করে, সমান পারিশ্রমিক আইন, ১৯৭৬-এর ৫ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলা কর্মী নিয়োগে কোনো বৈষম্য করা চলবে না।
তামিলনাড়ুর চেন্নাই প্ল্যান্টের পুরো ঘটনা
শ্রম মন্ত্রকের তরফে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে রাজ্য সরকার এই আইনের বিধানগুলি প্রয়োগ ও প্রশাসনের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, তাই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে একটি বিশদ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। এটি উল্লেখযোগ্য যে মঙ্গলবার রয়টার্সের একটি অনুসন্ধান মূলক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল যে ফক্সকন চেন্নাইয়ের কাছে তার আইফোন প্ল্যান্টে বিবাহিত মহিলাদের চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। সংস্থাটি বমনে করে যে অবিবাহিত মহিলাদের তুলনায় বিবাহিত মহিলাদের বেশি পারিবারিক দায়িত্ব রয়েছে, তাই সংস্থাটি তাদের নিয়োগ করতে চায় না।
দুই বিবাহিত বোনের উল্লেখ
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিবাহিত মহিলাদের চাকরির আবেদনগুলি Foxconn-এ প্রত্যাখ্যান করা হয়, এই সংস্থা আইফোন নির্মাতা অ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের জন্য অ্যাসেম্বলিং কাজ করে। বৈষম্যের এই ঘটনাটি চেন্নাই প্ল্যান্টে প্রকাশ পেয়েছে, যা বৈষম্যহীন নিয়োগের জন্য কোম্পানির প্রকাশ্যে বলা প্রতিশ্রুতির বিপরীত। তবে, তদন্তে জানা গেছে যে অ্যাপল এবং ফক্সকন উভয়ই ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে এই ধরনের মামলার মুখোমুখি হয়েছিল।
এই প্রতিবেদনে দুই বোন পার্বতী ও জানকির কথা বলা হয়েছে, যাদের বয়স ২০ বছর। চেন্নাইয়ে ফক্সকনের আইফোন কারখানায় তাদের এই বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। গত বছর২০২৩ সালের মার্চ মাসে, হোয়াটসঅ্যাপে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে, এই দুই বোন একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য এই প্ল্যান্টে আসে, কিন্তু প্রধান গেটে উপস্থিত নিরাপত্তা আধিকারিক তাদের ইন্টারভিউ দিতে দেয়নি এবং গেট থেকেই তাদের ফেরত পাঠায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আধিকারিক তাদের দুজনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আপনারা কি বিবাহিত?' উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উভয় বিবাহিত মহিলাকে ফিরে যেতে বলেন।
তদন্তে এমন বৈষম্যের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে
পার্বতীর মতে, শুধুমাত্র দুজনেই বিবাহিত হওয়ায় তাদের এই কাজ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে অনেকেই অবগত আছেন এবং যে অটোতে দুজনেই ইন্টারভিউয়ের জন্য পৌঁছেছিলেন সেই অটোর চালকও তাদের বিবাহিত নারীদের প্রতি ফক্সকনের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবের কথা বলেছেন এবং এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফক্সকন ইন্ডিয়ার প্রাক্তন এইচআর এক্সিকিউটিভ এস. পলও এই ধরনের আচরণের কথা মেনে নিয়েছেন এবং বলেছেন যে ফক্সকন বিশ্বাস করে যে বিবাহিত মহিলারা পারিবারিক দায়িত্ব এবং সম্ভাব্য গর্ভাবস্থার কারণে একটি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এস. পলের এই দাবিগুলি ফক্সকনের বিভিন্ন নিয়োগকারী সংস্থার ১৭ জন কর্মচারী এবং ৪ বর্তমান এবং প্রাক্তন এইচআর অফিসারেও সমর্থন পেয়েছে৷ তারা বলেন, অল্পবয়সী নারীদের তুলনায় বিবাহিত নারীদের দায়িত্ব বেশি এবং কাজে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, সেজন্য তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানিগুলো কী ব্যাখ্যা দিয়েছে?
তবে এই তদন্ত প্রতিবেদনের পর বিজনেস টুডে অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চায় তারা এ ধরনের কোনো প্রথা সম্পর্কে অবগত কিনা। তাই এই বিষয়ে কোম্পানি বলেছে যে আমরা সর্বোচ্চ সাপ্লাই চেইনের মান বজায় রাখি এবং ভারতে বিবাহিত মহিলাদের নিয়োগ দিচ্ছি। ফক্সকন চাকরিতে বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উভয় সংস্থাই নিয়োগের প্রক্রিয়াগুলিকে উন্নত করতে এবং তাদের নিজ নিজ আচরণবিধি মেনে চলার জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে হাইলাইট করেছে, যা বৈবাহিক অবস্থা, লিঙ্গ এবং অন্যান্য কারণের উপর ভিত্তি করে বৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে।