দুবাই মানেই ঝকঝকে শহর, আকাশছোঁয়া অট্টালিকা। কিন্তু এই ঝলমলে ছবির আড়ালে আছে হাজার হাজার শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রম। ভারত, বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু মানুষ রুজি রুটির টানে পাড়ি দেন সেদেশে। কেউ লেবার, কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ ঝালাইকর্মী, কেউ বা রাঁধুনি কিংবা নাপিত। সবার লক্ষ্য একটাই, 0দেশে থাকা পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
দুবাইতে একজন সাধারণ লেবার কত উপার্জন করেন?
হাওড়ার উলুবেড়িয়ার শ্রমিক সর্দার শেখ হাসিবুল জানালেন, একজন সাধারণ লেবার বা অল্প অভিজ্ঞ কর্মী মাসে প্রায় ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ দিরহাম পান। ভারতীয় টাকায় যা দাঁড়ায় আনুমানিক ৩৫ হাজার টাকা। যদি একটু দক্ষতা থাকে বা কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ে, তবে বেতন পৌঁছে যায় ২,০০০ দিরহাম বা তারও বেশি। অনেক সংস্থা আবার খাবার, থাকার জায়গা, চিকিৎসার খরচ সব কিছুই দেয়।
তবে সেদেশে সবই যে ফ্রিতে হয়ে যাবে, এমনটাও নয়। খরচও আছে। সেখানে খাবারদাবার, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। তবে হিসেব করে চললে মাস শেষে একজন শ্রমিক মোটামুটি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারবেন।
দক্ষ কর্মী হলেই বেশি লাভ
সাধারণ লেবার হিসাবে গেলে খুব বেশি যে লাভ, তা বলা যায় না। তবে অভিজ্ঞতা বাড়লে অবশ্যই বেতন বাড়ে। বিশেষত যাঁরা দক্ষ মিস্ত্রি, যেমন ঝালাইকর্মী(ওয়েল্ডার), রাজমিস্ত্রি বা ইলেকট্রিশিয়ান, তাঁদের বেতন তুলনায় অনেকটাই বেশি। এঁরা পান প্রায় ৩,৫০০ থেকে ৪,০০০ দিরহাম পর্যন্ত। ভারতীয় টাকায় যা প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি। এখানেও বিভিন্ন সংস্থার নিয়ম আলাদা। কোনও কোনও সংস্থা খাবার, থাকার সুবিধা দেয়। ফলে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে যাওয়ার থেকে, কোনও একটি লাইনের কাজ শিখে তারপর গেলে বেশি বেতন পাবেন।
খোঁজখবর নিয়ে এজেন্ট বাছুন
বিদেশে যাওয়ার আগে এজেন্টের কাছ থেকে সব খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া জরুরি। একেবারে অজানা, সন্দেহজনক এজেন্ট এড়ানোরও পরামর্শ দিলেন লেবার সর্দার হাসিবুল। তিনি বললেন, 'অনেক সময় লেবার সর্দার বা এজেন্টই আপনার মাইনের অর্ধেক নিয়ে নেন। আদতে আপনার বেতন ৫০ হাজার টাকা। এদিকে এজেন্ট বলবে ৩০ হাজার টাকা। এমন বহু ঘটনা ঘটে। তাই খোঁজখবর নিয়ে, সেই এজেন্টের হাত ধরে আগে যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল।'
দুবাই গেলেই লাখ লাখ টাকা নয়
প্রথম দিকে গিয়েই লাখ টাকা রোজগারের দিবাস্বপ্ন দেখা উচিত নয়। অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়লে তবেই বড় অঙ্কের টাকা ঘরে পাঠানো সম্ভব। তবে কাজ করতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে অনেক শ্রমিক মাসে ৩৫, ৪০ হাজার টাকা করে বাড়িতে পাঠাতে শুরু করেন। একটু দক্ষ শ্রমিকরা মাসে ৫০ হাজার টাকারও বেশি পাঠান।
তাই দুবাইয়ে কাজ মানে একদিকে যেমন কষ্ট, তেমনই অন্যদিকে ভবিষ্যত জীবন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করে তোলার সুযোগ। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য থাকলে বিদেশের মাটিতেও রোজগার করে পরিবারকে সুখে রাখা সম্ভব। তবে বিদেশ যাত্রার আগে অবশ্যই সব হিসেব, নিকেশ জেনে, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।