
ফেস্টিভ সিজন শুরু। প্রেক্ষাগৃহে একের পর এক নতুন ছবির ভিড়। কিন্তু টিকিটের দাম, ভিড়ের ঝক্কি এড়িয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন স্মার্টফোনে ‘ফ্রি’ মুভি দেখার দিকে। আর সেখানেই লুকিয়ে বড় বিপদ। বিনামূল্যে সিনেমা দেখানোর লোভে Pikashow-এর মতো পাইরেসি অ্যাপ ডাউনলোড করলে যে বিপাকে পড়তে হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন সংস্থা ‘সাইবার দোস্ত’ (I4C)। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, পুলিশ-থানার চক্কর কাটানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এক্স (টুইটার) প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট করে সাইবার দোস্ত জানিয়েছে, ‘ফ্রি মুভি’ দেখার লোভে নিজের ডেটা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিপন্ন করবেন না। পোস্টে সরাসরি বলা হয়েছে, এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করা একপ্রকার অপরাধের শামিল। অর্থাৎ বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত ঝুঁকির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আইনি জটিলতাও তৈরি হতে পারে।
কেন এত কড়া সতর্কতা? সাইবার দোস্তের ব্যাখ্যায় উঠে এসেছে একাধিক ভয়ঙ্কর দিক। Pikashow-এর মতো অ্যাপগুলি মূলত পাইরেসি কনটেন্ট সরবরাহ করে। এই ধরনের অ্যাপ কোনও সরকারি বা স্বীকৃত অ্যাপ স্টোরে পাওয়া যায় না। ফলে সেগুলি ইনস্টল করলেই স্মার্টফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। সাইবার দোস্তের দাবি, লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী না বুঝেই এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করছেন এবং নিজেদের অজান্তেই ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দিচ্ছেন অপরাধীদের হাতে।
আরও উদ্বেগের বিষয়, এই ধরনের অ্যাপ স্মার্টফোনে ঢুকেই ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার ইনস্টল করতে পারে। এর মাধ্যমে ফোনে থাকা সংবেদনশীল তথ্য—ব্যাঙ্কিং অ্যাপের লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড, ওটিপি—সবই হাতিয়ে নেওয়া সম্ভব। একবার এই তথ্য বাইরে চলে গেলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে বলে সতর্ক করেছে I4C।
শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, আইনি বিপদও কম নয়। সাইবার দোস্তের পোস্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পাইরেসি কনটেন্ট দেখা বা সেই উদ্দেশ্যে অ্যাপ ইনস্টল করাও আইনত দণ্ডনীয়। কপিরাইট আইন অনুযায়ী, পাইরেসি কনটেন্ট ব্যবহার করলে জরিমানা বা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপের মুখে পড়তে হতে পারে। অর্থাৎ ‘ফ্রি’ সিনেমা দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আদালত-কোর্ট বা থানার দরজায় হাজিরা দিতে হতে পারে।
এই সতর্কবার্তা নতুন নয়, তবে উৎসবের মরশুমে এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই সময়েই নতুন ছবি মুক্তি পায়, আর সেই সুযোগেই সক্রিয় হয়ে ওঠে পাইরেসি চক্র। সাধারণ ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করেই ছড়ানো হয় এই ধরনের অ্যাপ।
প্রশ্ন উঠছে, বিনোদনের খোঁজে কতটা ঝুঁকি নিতে রাজি আমরা? কয়েক ঘণ্টার ‘ফ্রি’ সিনেমা কি ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আইনি নিরাপত্তার থেকেও বেশি মূল্যবান? সাইবার দোস্তের বার্তা স্পষ্ট—লোভ সামলান, সুরক্ষিত থাকুন। না হলে বিনোদনের দাম দিতে হতে পারে অনেক বেশি।