প্রতিবছরই বাজেট বা জিএসটি সংস্কারের সময় তামাকজাত পণ্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। এবছরও হচ্ছে। কারণ সিগারেটের দাম নতুন জিএসটি সংস্কারে ব্যাপক বাড়তে চলেছে। নতুন জিএসটি কাঠামোর বিড়ি ও সিগারেটকে সরকারের দৃষ্টিতে সমানভাবে দেখছে না। কারণ, সিগারেটের উপর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত জিএসটি বসানো হয়েছে। সেখানে বিড়ির ওপর মাত্র ১৮ শতাংশ। কেন এই বৈষম্য?
গ্রামীণ অর্থনীতি ও বিড়ি শ্রমিকদের বাস্তবতা
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৪৯.৮২ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন। এদের বিশাল অংশই ছোট শহর ও গ্রামে বসবাস করেন। এবং বেশিরভাগই মহিলা। গবেষণা বলছে, বিড়ি উৎপাদনে ৯০ শতাংশ শ্রমিকই মহিলা, অধিকাংশই গৃহকর্মী। গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান লালনপালনের পাশাপাশি বাড়িতে বসে তাঁরা বিড়ি গুটিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তবে এই শিল্পে আয় অত্যন্ত কম। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ সেফটি কাউন্সিলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে ২০১০-১১ সালে একজন বিড়ি শ্রমিকের গড় মজুরি ছিল একজন সাধারণ শ্রমিকের আয়ের মাত্র ১৭%। পশ্চিমবঙ্গে শ্রমিকরা প্রতি ১০০০ বিড়িতে প্রায় ১৫০ টাকা পান। গড়ে প্রতিদিন ৪০০-৭০০টি বিড়ি উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের আয় দৈনিক মাত্র কয়েকশো টাকা।
কেন ট্যাক্স কম?
সরকার বিড়ির ওপর জিএসটি তুলনামূলক কম রেখেছে। মূল উদ্দেশ্য হল, গ্রামীণ শ্রমিকদের নগদ আয় রক্ষা করা। বিড়ির ব্যবহার বাড়লে, বিড়ি শ্রমিকরা টিকে থাকতে পারেন। বিড়ির মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত তেন্দু পাতা তোলা মধ্য ভারতের একটা বড় অংশের মানুষের কাজ। জিএসটি কমার ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কমে গিয়ে এই বনভিত্তিক জীবিকা সুরক্ষিত হবে।
সিগারেটের ক্ষেত্রে আলাদা
অন্যদিকে, সিগারেটকে মূলত শহুরে ও উচ্চ আয়ের পণ্য হিসেবে ধরা হয়। এর স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি উৎপাদন প্রক্রিয়াও বিড়ির তুলনায় যান্ত্রিক এবং সংগঠিত। ফলে সিগারেটের উপর করহার বেশি রাখা সরকারের কাছে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও কার্যকর।
ভবিষ্যৎ কর নীতি
তবে সরকারের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, বিড়ি, সিগারেট, গুটখা, জর্দা ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের ওপর বর্তমান করহার ও ক্ষতিপূরণ সেস বজায় থাকবে। যতদিন না ক্ষতিপূরণ সেস অ্যাকাউন্টের অধীনে নেওয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ সম্পূর্ণ হয়। ফলে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য নতুন হার কার্যকর হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।