আজকাল অনেকেই ২০, ৩০ বছর বয়স থেকেই অবসর জীবনের জন্য পরিকল্পনা শুরু দেন। সেটই অবশ্য বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ বেশিরভাগ লোকেরই আজকাল আর পেনশন বলে কিছু নেই। আবার অনেকেই ৪০ পেরিয়ে এসে ভাবতে শুরু করেন, ৬০ বছর বয়সে কাজ ছেড়ে দিলে জীবন চালানোর জন্য কত টাকা প্রয়োজন? বিশেষত ভারতের প্রেক্ষাপটে, যেখানে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৬-৭% মুদ্রাস্ফীতি, সেখানে সাধারণ, মিতব্যয়ী জীবনযাপন করতেও শুরু থেকে সঞ্চয় প্রয়োজন। বয়স অনুযায়ী সেটা কীভাবে করবেন?
২০–৩০ বছরের ক্ষেত্রে প্ল্যান
এই বয়সেই সাধারণত সবাই চাকরি বা ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম জীবনে চাকরি বা ব্যবসায় সাধারণত বেতনও কম থাকে। ধরুন এমন বয়সে কারও বর্তমানে মাসিক আয় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে। সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়াই যায় যে, আগামী কয়েক বছরে গড়ে প্রতি বছর ১০% হারে আয় বাড়বে। এই বয়সে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সময়। যত আগে বিনিয়োগ শুরু করবেন, তত বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা বাড়তে থাকবে।
অবসর জীবনে মাসে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার সমতুল্য আয় প্রয়োজন হবে (আজকের হিসাবে ২০ থেকে ২৫ হাজারের সমান)।
তার মানে ৬০ বছর বয়সে যেতে যেতে আপনাকে অন্তত ২.৫, ৩ কোটি টাকার রিটায়ারমেন্ট ফান্ড তৈরি করতে হবে।
এই টার্গেট পূরণে মাসিক আয়ের অন্তত ২০ থেকে ২৫% সঞ্চয় করা উচিত। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা মিউচুয়াল ফান্ড, পিপিএফ বা ইপিএফে বিনিয়োগ করা শুরু করুন। তবে কিছু টাকা অবশ্যই এফডির মতো ঝুঁকিহীন খাতে বিনিয়োগ করুন।
৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের ক্ষেত্রে প্ল্যান
এই বয়সে চাকরি বা ব্যবসা কিছুটা এগিয়ে যায়। ফলে আয় আগের তুলনায় কিছুটা হলেও বাড়ে। তবে এই সময়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ। সংসার খরচ ও বাড়তি বেতনের চক্রে অনেকেই সঞ্চয়ের চেষ্টাই ছেড়ে দেন। এটা করলে কিন্তু খুব ভুল করবেন। ধরুন, এই বয়সে কোনও ব্যক্তির গড়ে মাসিক আয় ৪৫ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে। তবে এক্ষেত্রে আপনার হাতে সময়টা কম। ফলে সঞ্চয়ের হার বাড়ানো জরুরি।
আপনার অবসর নেওয়ার সময় মাসিক ব্যয় হবে আজকের হিসাবে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
সেই হিসেবে মোট প্রয়োজন হবে অন্তত ১.৫ থেকে ২ কোটি টাকা।
এই টার্গেট পূরণের জন্য মাসিক আয়ের ৩০-৩৫% সেভ করা উচিত। অর্থাৎ, অন্তত ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা রিটায়ারমেন্ট ফান্ডে রাখা প্রয়োজন। এত টাকা জমানো মোটেও সহজ নয়। তবে চেষ্টা করুন বাজে খরচ কমানোর। স্বাস্থ্যে নজর দিন। কারণ এই বয়স থেকে অনেকের ওষুধ, চিকিৎসার খরচ শুরু হয়। সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে সেই খরচ কমানোর চেষ্টা করুন।
যাঁরা দেরিতে শুরু করছেন, তাঁদের ঝুঁকি কমাতে ফিক্সড ডিপোজিট, ডেব্ট ফান্ড এবং পেনশন স্কিমের মতো নিরাপদ বিনিয়োগেই টাকা রাখা উচিত।
৫০ বছরের ঊর্ধ্বে
এই বয়সে মাসিক আয় সাধারণত ৫৫ হাজার টাকা বা তারও বেশি থাকে। কিন্তু হাতে সময় খুবই কম। তাই ঝুঁকি নেওয়ার সুযোগও নেই।
অবসর নেওয়ার সময় মাসিক ব্যয় আজকের হিসাবে প্রায় ৪০ হাজার টাকায় দাঁড়াতে পারে।
সেই হিসেবে অন্তত ১ থেকে ১.২ কোটি টাকার রিটায়ারমেন্ট ফান্ড তৈরি করতে হবে।
যেহেতু হাতে ১০ বছরেরও কম সময় থাকে, তাই মাসিক আয়ের ৪০ থেকে ৫০% পর্যন্ত সঞ্চয় করা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পিএফ, ফিক্সড ডিপোজিটের মতো বিনিয়োগে রাখা উচিত।
পিপিএফ, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম, বা অ্যানুইটি প্ল্যান এই বয়সের জন্য ভাল অপশন।
কত শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত?
বয়স যত কম, সঞ্চয়ের হারও তত কম রাখা যায়। তবে এর একটি থাম্ব রুলও আছে,
২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে: অন্তত ২০ থেকে ২৫%
৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে: অন্তত ৩০ থেকে ৩৫%
৫০ পারের পরে: অন্তত ৪০ থেকে ৫০%
ফলে অবসর নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে মোটেও হেলাফেলা করবেন না। বিলাসিতা করার আগে মিনিমাম সেভিংস হচ্ছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করুন। কারণ মনে রাখবেন, আজকের ২০ হাজার টাকা ৩০ বছর পরে ৬০ হাজার টাকার সমান হয়ে যাবে। তাই যত তাড়াতাড়ি সঞ্চয় শুরু করবেন, অবসর জীবনে ততটাই নিশ্চিন্তে, ফূর্তিতে থাকবেন।