আজ দেশে সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রাম ১ লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে। আজ থেকে ৭৮ বছর আগে দেশের স্বাধীনতার সময় সোনার দাম কত ছিল জানেন? জানলে অবাক হবেন। গত ৭৮ বছরে দেশে অনেক কিছুই বদলে গেছে। আজ, ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৃতীয় স্থানে পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, সোনা ও রুপোর দাম, জিডিপি, পেট্রোল এবং খাদ্যদ্রব্যের দামের সঙ্গে তুলনা করলে আকাশ-পাতাল তফাৎ লক্ষণীয়। যা জানলে অবাক হবেন।
৭৮ বছরে দেশ কতটা বদলেছে?
- ভারতীয়দের বরাবরই সোনার প্রতি বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে। ১৯৪৭ সালে প্রতি ১০ গ্রামে সোনার দাম ছিল প্রায় ৮৮ টাকা, যা এখন ১ লক্ষ টাকারও বেশি। আজ ১৫ অগাস্ট ২০২৫-এ ২২ ক্যারেট সোনার দাম রয়েছে ৯২, ৯০০ টাকা। ২৪ ক্যারেটের দাম রয়েছে ১, ০১, ৩৫০ টাকা।
- স্বাধীনতার ঠিক আগে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে রুপোর দাম প্রতি কেজির প্রায় ১০৬ টাকা ছিল, যা ২০২৫ সালে প্রতি কেজি ১,১০,০০ টাকারও বেশি হয়েছে।
- ১৯৪৭ সালে ভারতে পেট্রোলের দাম ছিল প্রতি লিটারে প্রায় ২৫-২৭ পয়সা। যা ২০২৫ সালে বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে, বর্তমানে দিল্লিতে এক লিটার পেট্রোলের দাম প্রায় ৯৫ টাকা। কলকাতায় ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
- ১৯৪৭ সালে চালের দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল প্রায় ১০ থেকে ১৬ টাকা। অর্থাৎ, স্বাধীনতার সময়, চালের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ০.১০ থেকে ০.১৬ পয়সা। যা এখন গড়ে ৪০ টাকা প্রতি কেজি, ভালো চাল এর চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল।
- স্বাধীনতার সময় ভারতে ডিমের দাম ছিল প্রতি ডিমের দাম প্রায় ২ থেকে ৪ পয়সা। বর্তমানে ভারতে একটি ডিম ৮-১০ টাকায় পাওয়া যায়।
- ১৯৪৭ সালে প্রতি কেজি ১৫-২০ পয়সায় পাওয়া যেত সরষের তেল। স্বাধীনতার সময় ভোজ্যতেলের দাম খুব কম ছিল, এখন ২০২৫ সালে সরষের তেল প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটায়।
- বর্তমানে দেশে আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যেখানে ১৯৪৭ সালে আলুর দাম ছিল প্রতি কুইন্টাল (১০০ কেজি) প্রায় ৩ থেকে ৫ টাকা, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫ পয়সা প্রতি কেজি পাওয়া যেত।
১৯৪৭ সালে মানুষ কত আয় করত?
১৯৪৭ সালে ১০ গ্রাম সোনা ৮৮ টাকায় পাওয়া যেত, যা খুবই সস্তা ছিল। সেই সময়ের আয় এবং মুদ্রাস্ফীতির বিচারে ৮৮ টাকাও অনেক বেশি ছিল। কারণ দেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করছিল, কর্মসংস্থানের সুযোগ কম ছিল, মানুষের আয় সীমিত ছিল।
স্বাধীনতার সময়, মাথাপিছু আয় ছিল বার্ষিক প্রায় ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, যা প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ টাকার সমতুল্য। এই আয় মূলত কৃষি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে আসত, কারণ জনসংখ্যার বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলে বাস করত এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। সংগঠিত ক্ষেত্রে (সরকারি চাকরি, রেলওয়ে) কর্মরত কর্মচারীদের গড় মাসিক বেতন ছিল ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। এখন বার্ষিক মাথাপিছু আয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা।
১৯৪৭ সালে ভারতের খুচরা মুদ্রাস্ফীতির হার সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য নেই। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যের দাম যেভাবে ছিল তা বিবেচনা করলে, সেই সময়ে আনুমানিক খুচরা মুদ্রাস্ফীতির হার অবশ্যই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। কারণ, দেশ তাৎক্ষণিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কারণে খাদ্যদ্রব্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ওঠানামা দেখা দেয়। বর্তমানে, অর্থাৎ ২০২৫ সালে, গড় খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ৩-৪ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, ১৯৪৭ সালে ১ মার্কিন ডলার ছিল প্রায় ৩.৩ টাকার সমান। এই ভিত্তিতে, ভারতের জিডিপি হত প্রায় ৮০০-৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে বর্তমানে এক ডলার প্রায় ৮৬ টাকার সমান, এবং ভারতের জিডিপি প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার।