মাখানা বা পদ্মবীজ, সম্প্রতি একটি সুপারফুড হিসেবে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যদিও এর পুষ্টিগুণ অনস্বীকার্য, তবে এর উচ্চমূল্য অনেকের কৌতূহলের কারণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন মাখানা এত ব্যয়বহুল এবং কীভাবে এটি স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
মাখানার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
মাখানা প্রোটিন, ফাইবার এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এর প্রধান উপকারিতা হলো:
হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য: মাখানায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম ও পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে ক্যালোরি কম কিন্তু প্রোটিন বেশি, ফলে ক্ষুধা কমায় এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
হজমের উন্নতি: উচ্চ ফাইবার উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং হজমে সাহায্য করে।
বার্ধক্য প্রতিরোধ: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখে ও বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
মাখানার দাম এত বেশি কেন?
১. শ্রমসাধ্য ও জটিল ফসল তোলার প্রক্রিয়া:
মাখানা সংগ্রহের কাজ অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য। কৃষকরা কর্দমাক্ত পুকুরের তলদেশ থেকে বীজ তুলতে বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করেন। এ প্রক্রিয়ায় শারীরিক শ্রমের পাশাপাশি দক্ষতারও প্রয়োজন হয়।
২. সীমিত উৎপাদন এলাকা:
বিশ্বের প্রায় ৯০% মাখানা ভারতের বিহারে উৎপাদিত হয়। উৎপাদন এলাকায় সীমাবদ্ধতার কারণে সরবরাহ কম থাকে, ফলে দাম বাড়ে।
৩. সূক্ষ্ম প্রক্রিয়াজাতকরণ:
বীজ থেকে মাখানা উৎপাদন করতে হলে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার, শুকানো, ভাজা এবং ফুলিয়ে তুলতে হয়। প্রতিটি ধাপে নিখুঁততা প্রয়োজন, যা খরচ বাড়িয়ে দেয়।
৪. চাহিদার বৃদ্ধির প্রভাব:
২০২২ সালে মাখানা জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) ট্যাগ পাওয়ার পর, এর আন্তর্জাতিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মাখানার দাম ৩৯% থেকে ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে।
৫. পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ:
মাখানার ভঙ্গুর প্রকৃতি ভাঙা রোধে বিশেষ প্যাকেজিং প্রয়োজন, যা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ায়।
মূল্য পরিবর্তনের পরিসংখ্যান:
গত দশকে: প্রায় ৭০০% মূল্যবৃদ্ধি (প্রতি কেজি ₹১০০০ থেকে ₹৮০০০)।
২০২০-২০২৫: প্রায় ৩৯%-৫০% দাম বেড়েছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি: বাজেট ঘোষণার পর এক লাফে ৩২% বৃদ্ধি (প্রতি কেজি ₹৯৫০ থেকে ₹১২৫০)।