করোনার কারনে দীর্ঘদিন থেকে পাহাড়ে পর্যটক শূন্য ছিল। তবে পুজোর এই মরশুমে ফের পাহাড়ে আসা শুরু করেছিল পর্যটকরা। তবে এবার নতুন বাধা হল পাহাড়ের প্রকৃতিক বিপর্যয়। তার ওপর শনিবার থেকে পাহাড়ে ডিজেলের দাম পার করলো ১০০ এর গন্ডি। সব মিলিয়ে গোদের ওপর বিষফোঁড়া। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা বাড়ছে পাহাড়ের গাড়িচালকদের।
ঘুরপথে পাহাড়ে
চলতি সপ্তাহে সোমবার বিকেল থেকে একটানা লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের লাইফলাইন ১০ নং জাতীয় সড়কে ধস নামে। যার জেরে এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে ওই পথে যান চলাচল। অন্যদিকে দার্জিলিংয়ের প্রধান সড়ক ৫৫ নং জাতীয় সড়ক হিলকার্ট রোডে মহানদী এলাকায় ধস নামে। বিপর্যস্ত যান চলাচলও। ফলে স্বভাবতই শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ সিকিম কিংবা কালিম্পঙে যেতে হলে মিরিক হয়ে অনেকটা ঘুরপথে যেতে হচ্ছে পাহাড়ে। ফলে একদিকে যেমন সময় দ্বিগুণ লাগছে, পাশাপাশি পর্যটকদের দ্বিগুন ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ভাড়াও দ্বিগুণ
অন্যদিকে, পাহাড়ের এই পরিস্থিতি থাকায় পর্যকদের দেখা নেই। কেবলমাত্র, প্রয়োজনে কাজের সূত্রেই পাহাড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে যাত্রীদের। এই মুহূর্তে সিকিম যেতে হলে শিলিগুড়ি জংশন থেকে গাড়ি ছেড়ে দার্জিলিং জেলার মিরিক কালিম্পঙের লাভা হয়ে সিকিম পৌঁছাচ্ছে। আগে শিলিগুড়ির থেকে ১০ নং জাতীয় সড়ক ধরে সিকিম যেতে হলে সময় লাগতো প্রায় ৪ ঘন্টা। এখন মিরিক দিয়ে ঘুরপথে সিকিমে পৌঁছতে সময় লাগছে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা। এতে যাত্রী প্রতি ভাড়াও লাগছে প্রায় দ্বিগুণের বেশি। আগে ছোট গাড়িতে শিলিগুড়ি থেকে সিকিমে যেতে যাত্রীদের জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। সেই জায়গায় এখন সিকিমের ভাড়া লাগছে ৭০০- ৮০০ টাকা। অন্যদিকে দক্ষিণ সিকিমের নামচি যেতে ভাড়া লাগছে প্রায় ১০০০ টাকার কাছাকাছি।
রাস্তা বন্ধ
অন্যদিকে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা হল ৫৫ নং জাতীয় সড়ক হিলকার্ট রোড। তবে কার্শিয়াংয়ে মহানদী এলাকায় এই জাতীয় সড়কে ধস নামায় বন্ধ রয়েছে ওই পথ। ফলে দার্জিলিং যেতে হলে মিরিক হয়ে যাচ্ছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে ভাড়াও দ্বিগুণ লাগছে। ফলে কালীপুজার আগে পর্যটকদের আসার একটা সম্ভাবনায় কিছুটা লাভের আশা দেখছিলেন গাড়ি চালকরা কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে তা কার্যত নিরাশায় পরিণত হয়েছে।
তেলের খরচ, যাত্রাপথ বেশি
শিলিগুড়ির জংশন এলাকার গাড়ি চালক সন্তোষ গুরুং বলেন, লাগাতার বৃষ্টিতে কালিম্পঙে ১০ নং জাতীয় সড়কে ধস নামায় বন্ধ রয়েছে রাস্তা। তাই এখন সিকিম যেতে হলে দার্জিলিং জেলার মিরিক ও লাভা হয়ে তবেই সিকিম পৌঁছতে হচ্ছে। ফলে অনেকটা ঘুরপথে সিকিম যেতে হচ্ছে তাই তেল খরচ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। স্বভাবতই ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে।
কর ছাড় মিললে ভাড়া কমবে
অন্যদিকে ওপর গাড়ি চালক বিকাশ ছেত্রী বলেন, আগে সিকিম যেতে হলে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা কিন্তু এখন মিরিক হয়ে যেতে হচ্ছে বলে জ্বলানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে তাই এখন জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। সরকারের কাছে আবেদন এই পরিস্থিতিতে যদি গাড়ির ট্যাক্স বাবদ কিছুটা ছাড় দেওয়া হয় সুবিধা হবে।
পরিস্থিতির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে পর্যটন ব্যবসায় সম্রাট সান্যাল বলেন, যেহেতু গাড়িগুলি অনেকটা ঘুরে যাচ্ছে তাই তেলের জন্য যেটুকু খরচ সেটুকু নেওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কেউ যাতে ব্যবসা না করে সেই বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে দেখতে হবে। পাশাপাশি নজর রাখতে হবে কোনো গাড়িচালককে যাতে পর্যটক কিংবা যাত্রীদের কাছে ভাড়া নাম করে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করে।