আলুর দাম নিয়ে চাষিদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বেড়েছিল। হিমঘরে রাখা আলুর জন্য কেজি প্রতি মাত্র ৬-৭ টাকা পাচ্ছিলেন চাষিরা। এদিকে এই আলুই খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭ থেকে ১৯ টাকা দরে। ব্যাপক লাভ করছেন ফড়ে ও বড় ব্যবসায়ীরা। মাঝখান দিয়ে চাষিরা পড়েছেন চরম আর্থিক সঙ্কটে। অথচ হিমঘরে মজুত রাখা আলুর দাম এতটাই কম যে, খরচও উঠছে না।
আলুর দামে নিয়ে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলন করে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোশিয়েশন। তাতে বাজার দর এবং বিক্রি হওয়া আলুর দামে চাষিদের ক্ষতির দিকটি তুলে ধরা হয়। সেইসঙ্গে হিমঘরে যে বিপুল পরিমাণ আলু পড়ে রয়েছে তাতে ন্যায্য দাম দিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়।
হিমঘরে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে
চলতি বছর রাজ্যের হিমঘরে ৭০.৮৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুদ করা হয়েছিল। আলু উৎপাদনের ৬০:৪০ অনুপাতে বাজারে যায়। যার ৬০% রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার করা হয়। বাকি ৪০% অন্যান্য রাজ্যে চলে যায়। কিন্তু গত বছর আন্তঃরাজ্য আলুর পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার কারণে, প্রায় ১০ লক্ষ মেট্রিক টন আগের জাতের আলুও হিমঘরে সংরক্ষণ করা ছিল। যে কারণে হিমঘরে রেকর্ড পরিমাণ আলু মজুদ রয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য ন্যূনতম ৯ টাকা প্রতি কেজি সহায়ক মূল্য ঘোষণা করেছে। সরকারি ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে কৃষকেরা আলু বিক্রি করছেন। ভবিষ্যতে বিক্রির জন্য তারা কিছু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণও করেছেন। এই মরশুমে আলু মজুদের প্রায় ৭৫% থেকে ৮০% কৃষকদের।
আলুর দাম ১৫ টাকা প্রতি কেজি হওয়ার কথা
আলু ছাড়ার মরসুমে সরকার ঘোষণা করেছিল সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য ১৫ টাকা প্রতি কেজি দেওয়া হবে। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে তা হুগলি জেলার সিঙ্গুর পাইকারি বাজারে মানের জন্য ১১ টাকা প্রতি কেজিতে। বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জেলা এবং উত্তরবঙ্গে কোল্ড স্টোরেজ গেটে ৯ টাকা প্রতি কেজি থেকে ১০ টাকা প্রতি কেজিতে নেমে আসে। এতে কৃষকদের সরাসরি ক্ষতি করছে কারণ তারা প্রতি কুইন্টালে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে।
কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি
ন্যায্য দাম না দেওয়া হলে কৃষকদের ক্ষতি ব্যাপক ক্ষতি হবে। অদূর ভবিষ্যতে চাহিদা বনাম সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি হবে।
পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রী সুনীল কুমার রানা বলেন, “পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দামের মধ্যে বর্তমান বৈষম্য অস্থিতিশীল। এটি সরাসরি কৃষকদের ক্ষতি করছে। যারা এই মরশুমে প্রায় ৮০% ফসল সংরক্ষণ করেছেন। সরকারকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ক্রয়, আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য এবং মিড-ডে মিলের মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে আলুর ব্যবহার যাতে বাড়ানো হয় এই পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করছি।"