দিপাবলির পরেই বড় খুশির খবর পেতে চলেছেন এ রাজ্যের কৃষকরা। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চলেছে মোটা অঙ্কের টাকা। সরকারি প্রকল্পের টাকা একসঙ্গে অ্যাকাউন্টে ঢোকায় অনেকটাই উপকৃত হবেন রাজ্যের কৃষকরা। জানা গিয়েছে, 'কৃষক বন্ধু' প্রকল্পে টাকা ঢুকবে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে। প্রসঙ্গত, বছরে দুটি খাতে এই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকে কৃষকদের। এরমধ্যে খরিফ মরসুমের আগে একটি ইনস্টলমেন্টের টাকা ঢোকে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে। কালীপুজোর পরই শুরু হয় খরিফ মরসুম। তাই কালীপুজোর ঠিক পরই সরাসরি রাজ্যের কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে এই কৃষক বন্ধু প্রকল্পের একটি কিস্তির টাকা।
টাকা পেতে কী করতে হবে?
বলা যেতেই পারে রাজ্যের কৃষকদের সুদিন ফিরতে চলেছে কালীপুজোর পর। সৌজন্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষকবন্ধু প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। তবে একলপ্তে দশ হাজার টাকা ঢোকে না। এই প্রকল্পের টাকা ঢোকে দুই কিস্তিতে। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে নির্ধারিত ফর্মাটে আবেদন করতে হবে গ্রাহককে। বছরে দুই পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা করে এই গোটা টাকাটা পাওয়া যাবে। মূলত রাজ্যের যে সমস্ত পুরুষ পেশায় কৃষক তাঁরা এই সুবিধা পাবেন। বিঘের পর বিঘে জিতে চাষাবাদের যে বিপুল খরচ হয় তা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দিতে এই অর্থ সাহায্য মিলবে বলে জানা গিয়েছে।
কৃষককে গ্রাম পঞ্চায়েতে (GP) আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। কৃষককে আবেদনের সময় প্রাসঙ্গিক নথির ফটোকপি জমা দিতে হবে এবং যাচাইয়ের জন্য আসলটিও দিতে হবে। যে কৃষকের আবেদন ক্যাম্পে গৃহীত হয়েছে, তাদের কৃষকবন্ধু (কেবি) অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে যাচাই করা হবে এবং আবেদনকারীকে ঘটনাস্থলেই একটি স্বীকৃতি স্লিপ দেওয়া হবে। যদি দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে ফিজিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনের ডিজিটাইজেশন সম্ভব না হয়, তাহলে কেবি অ্যাপ ব্যবহার করে ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ এগ্রিকালচার (ADA) এর অফিসে এটি ডিজিটাইজ করা হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি স্বীকৃতি আইডি তৈরি হবে। কেবি পোর্টালে প্রত্যেক আবেদনকারীর জন্য। ADA আবেদনের বিবরণ এবং জমির বিবরণ যাচাই করবে। যাচাই করার পরে, বিশদ বিবরণ সঠিক বলে পাওয়া গেলে, ADA কেসটি অনুমোদন করবে এবং এর ফলে তালিকাভুক্তি সম্পন্ন হবে। বিশদ বিবরণ ভুল থাকলে, তিনি আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করবেন এবং ফাইল করবেন। আবেদনকারী প্রত্যাখ্যানের কারণ জানিয়ে একটি সিস্টেম-জেনারেটেড এসএমএস পাবেন।
এবার জেনে নেওয়া যাক 'কৃষক বন্ধু' নিশ্চিত আয় প্রকল্পের আওতায় কী কী সুবিধা মেলে?
যে সমস্ত কৃষকের এক একর বা তার বেশি চাষযোগ্য জমি রয়েছে তাঁরা বছরে একর প্রতি ১০ হাজার টাকা পাবেন। যে সমস্ত কৃষকের এক একর বা তার কম চাষযোগ্য জমি রয়েছে তাঁরা একর প্রতি চার হাজার টাকা করে পাবেন। প্রতি বছর দুবার, অর্থাৎ খরিফ ও রবি মরসুমে দুটি কিস্তিতে এই টাকা মিলবে।
এই প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে কী যোগ্যতা থাকতে হবে?
আবেদনকারীকে অবশ্যই রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে, আবেদনকারী চাষি বা ভাগচাষির অবশ্যই পাট্টা থাকতে হবে, ডেথ বেনিফিটের ক্ষেত্রে কৃষকের বয়স ১৮-৬০ বছর হতে হবে। মৃতের নিকট আত্মীয় এককালীন দু লক্ষ টাকা পাবেন। সেই নিকট আত্মীয়কে ঠিক করবেন ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার।
কী কী জমা দিতে হবে?
চাষযোগ্য জমির সর্বশেষ RoR/ RoR বর্গা/পাট্টা রেকর্ড/বন পাট্টার রেকর্ড, বৈধ ভোটার আইডি কার্ড (বাধ্যতামূলক), আধার কার্ড (ঐচ্ছিক), ব্যাঙ্ক পাস বই প্রথম পৃষ্ঠা কিংবা বাতিল চেক, একটি পাসপোর্ট সাইজের সাম্প্রতিক ছবি (মূল), বৈধ মোবাইল ফোন নম্বর
প্রথম পর্যায়ে চাষাবাদের শুরুতে একলপ্তে মিলবে পাঁচ হাজার টাকা। ভাবুন একসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। এই টাকার পুরোটাই যে চাষের কাজে নাও লাগতে পারে। তাই কিছুটা হলেও যদি টাকা বাঁচাতে পারেন তাহলে সেই টাকা ব্যাঙ্কে বা পোস্ট অফিসে রেখে দিলেও নিশ্চিত আয়ের সুযোগ থাকছেই। পরের পর্যায়ে আবার পাঁচ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এখানেই শেষ নয়, কোনও কৃষকের যদি মৃত্যু হয় তাহলেও বিশেষ সহায়তা হিসাবে তাঁর পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। ১৮ থেকে ৬০ বছরের কৃষকরা এই সুবিধা পাবেন।