প্রযুক্তি যতই আটসাঁট হোক, চোর, প্রতারকরা একটি না একটি পথ বের করেই নিচ্ছে। রেলের টিকি বুকিংয়ে, বিশেষ করে তত্কাল টিকিটে দালালরাজ খ করতে রেল কড়া ব্যবস্থা নিলেও, দিনের শেষে সেই ফসকা গেরো। আপনার হয়তো এমার্জেন্সি। তৎকাল টিকিটের জন্য হাহুতাশ করছেন। অথচ কিছু লোক ঠিক এক মিনিটে টিকিট বুক করে নিচ্ছে! হ্যাঁ, টেলিগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপে গোপনে চলছে এক বিশাল র্যাকেট। সরকারি নিয়ম-কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আধার ভেরিফায়েড আইডি আর বট সফটওয়্যার দিয়ে কেলেঙ্কারি চলছে।
নতুন নিয়মেও থামছে না ঠকবাজি
রেল মন্ত্রক ১ জুলাই থেকে একটা নতুন নিয়ম চালু করেছে। তৎকাল টিকিট এখন শুধু IRCTC-এর ওয়েবসাইট আর অ্যাপে পাওয়া যাবে। আর একমাত্র তখনই আপনি টিকিট পাবেন, যদি আপনার IRCTC অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার কার্ড লিংক করা থাকে। সরকার ভেবেছিল এতে ফেক ID আর দুর্নীতি বন্ধ হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো। নিয়মের ফাঁক গলে আরও জোরে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে।
টেলিগ্রামে রমরমিয়ে চলছে চোরাগোপ্তা ব্যবসা
India Today-র এক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ৪০টির বেশি টেলিগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চলছে এই টিকিট বেচা-কেনা। এক একটা আধার ভেরিফায়েড IRCTC ID মাত্র ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে! শুধু তাই না, সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে এক মিনিটে টিকিট বুক করার ‘গ্যারান্টি’ দেওয়া BOT সফটওয়্যারও।
এই BOT কী করে?
এই বটগুলি এমনভাবে তৈরি, যেগুলি আপনাকে কিছু টাইপ না করেই টিকিট বুক করে দেয়। ট্রেন নম্বর, যাত্রীর নাম, বয়স, মোবাইল নম্বর—সব আগে থেকেই বসানো থাকে। যেই রেলওয়ের সাইট খুলল, এক ঝটকায় সব ভর্তি করে দেয় এই সফটওয়্যার। আর আপনি যখন ধীর গতিতে সাইট লোড হওয়ার অপেক্ষায়, তখন ওরা এক মিনিটে টিকিট নিয়ে নেয়। এই বট কিনতে খরচ হয় ৯৯৯ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। Dragon, JetX, Ocean—এই নামে বট চলে। সঙ্গে দেওয়া হয় নির্দেশনাও, কীভাবে ব্যবহার করবেন।
শুধু টিকিট নয়, ডেটা চুরি করছে!
এই বট শুধু টিকিট বুক করে না, আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও চুরি করতে পারে। India Today-র রিপোর্টে এক WinZip ফাইল স্ক্যান করে দেখা গেছে, সেখানে এক ধরনের ভাইরাস (ট্রোজান) ছিল, যেটা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে নিতে পারে।
রেলের কী পদক্ষেপ?
রেল মন্ত্রক জানিয়েছে—
এখন তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের প্রথম ৩০ মিনিট এজেন্টরা করতে পারবে না।
নতুন Anti-bot সিস্টেম বসানো হয়েছে, যাতে ফেক অ্যাকাউন্ট ধরা পড়ে।
এখনও পর্যন্ত ২.৫ কোটির বেশি ফেক IRCTC অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তৎকাল টিকিট খোলার পর প্রথম ৫ মিনিটে ৫০% ট্র্যাফিকই আসে এই বট থেকেই!
আপনি যখন টিকিট কাটতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন, তখন কিছু চক্র এক মিনিটেই বট দিয়ে কনফার্ম টিকিট কেটে নিচ্ছে। আর তার জন্য অন্য লোকের আধার, OTP, ID সব বিক্রি হচ্ছে টেলিগ্রামে। এই চক্রে আছে এজেন্ট, হ্যাকার, বিদেশি নম্বর ব্যবহার করা অ্যাডমিন—সবাই মিলে রেলওয়ের নতুন নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে। এই চক্র বন্ধ না হলে সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিতই থাকবেন। রেলওয়ের উচিত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, আর সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকা—কোনও প্রলোভনে ভুলেও এই সব ভুয়ো বট বা ID কেনা নয়।