দীপাবলির পর রুপোর দাম কিছুটা নামার সম্ভাবনা আছে (১০–২০% পর্যন্ত)
শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে দীর্ঘমেয়াদে দাম আবার বাড়তে পারে
রুপো দীর্ঘমেয়াদে ভালো বিনিয়োগ হতে পারে।
দীপাবলির আগে রুপোর দাম আকাশছোঁয়া। ধনতেরাসে ৯৮% বৃদ্ধি পেয়েছে দাম। সেক্ষেত্রে সোনার পাশাপাশি রুপো কিনতে গিয়েও পকেটে ছ্যাঁকা লাগছে। উৎসবের পর কি দাম কমবে? উঠছে প্রশ্ন।
গত বছরের ধনতেরাসে যেখানে ১০ গ্রাম রুপোর কয়েন কিনতে প্রায় ১ হাজার ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, এ বছর সেই দাম লাফিয়ে বেড়েছে। রুপোর দাম এ বছর দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৯৫০ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে প্রায় ৯৮% বৃদ্ধি পেয়েছে রুপোর দাম। এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সোনাকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। যেখানে সোনার দাম বেড়েছে ৫৫–৬০%।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পক্ষেত্রে চাহিদা, উৎসবের কেনাকাটা, এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, সব মিলিয়েই রুপোর দামে এমন বিরাট লাফ দেখা গিয়েছে।
রুপোর দামের ফারাক
১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লি, কলকাতা ও মুম্বইয়ে রুপোর দাম ছুঁয়েছে প্রতি কেজিতে ১ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। চেন্নাইয়ে পেরিয়েছে ২ লক্ষের গণ্ডি। মাত্র দু'দিনে (১৩–১৪ অক্টোবর) দাম বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার টাকা। গত চার মাসে হয়েছে এই বৃদ্ধি।
ভারতে ধনতেরাস ও বিয়ের মরশুম আসন্ন। অনেক ব্যবসায়ী নতুন অর্ডার বন্ধ রেখেছেন। মুম্বইয়ের বান্দ্রার গয়নার ব্যবসায়ী জিতেন্দ্র কুমার বলেন, 'বিয়ের জন্য প্রয়োজন বলেই কিছু মানুষ এখন রুপো কিনছেন। বাকিরা অপেক্ষায় আছেন দাম কমার।'
কেন রুপোর দাম এত বেড়েছে?
ভবিষ্যতে মার্কেটের উচ্ছ্বাস: এ বছর এমসিএক্সে রুপোর কনট্রাক্ট ছুঁয়েছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রতি কেজি, যা স্পট দামের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা: বিনিয়োগকারীরা রুপোকে ব্যবহার করছেন ইনফ্লেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে।
শিল্পক্ষেত্রে চাহিদা: ইলেকট্রিক গাড়ি (EV), সোলার প্যানেল, ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে রুপোর ব্যবহার বাড়ছে।
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা: মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের সংঘাত, এবং এশিয়ার রাজনৈতিক উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের রুপোর দিকে টানছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে।
রুপোর দাম কি কমবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীপাবলির পর উৎসবের কেনাকাটা থেমে গেলে দাম কিছুটা নেমে আসতে পারে। রেনিশা চৈনানি, হেড অফ রিসার্চ বলেছেন, 'উৎসবের কেনাকাটা শেষ হলে বাজার স্বাভাবিক হবে। আমি আশা করছি আগামী সপ্তাহ থেকেই দাম কমা শুরু হতে পারে।' জিগর ত্রিবেদী, সিনিয়র অ্যানালিস্ট, Reliance Securities বলেন,
'দামের দ্রুত উত্থান হয়েছে, তাই ১০–২০% পর্যন্ত পতন সম্ভব। ডলার শক্তিশালী হলে বা বিনিয়োগকারীরা লাভ তুলে নিলে দাম কিছুটা নামতে পারে।'Motilal Oswal Financial Services (MOFSL)-এর রিপোর্টেও বলা হয়েছে, স্বল্পমেয়াদে সংশোধন হলেও দীর্ঘমেয়াদে রুপোর দাম আরও বাড়তে পারে। ২০২৭ সালের মধ্যে তা ৭৭ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছতে পারে। যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার প্রতি কেজি।'
কোন কোন কারণে দাম কমতে পারে?
উৎসব-পরবর্তী কেনাকাটা কমে যাওয়া, EV ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে মন্দা, রুপোর বিকল্প কোনও ধাতুর আবিষ্কার, ডলার শক্তিশালী হওয়া ও সুদের হার বৃদ্ধি। জিগর ত্রিবেদীর মতে, 'যদি ইভি বা চিপ শিল্পে ধীরগতি আসে, তবে রুপোর শিল্পগত চাহিদা কমে যেতে পারে।'
দীর্ঘমেয়াদে রুপোর দাম কি আবার বাড়বে?
MOFSL-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ কোটি আউন্স রুপোর ঘাটতি থাকবে এবং দৃশ্যমান স্টক কমে যাবে ৮৯ কোটি আউন্সে। তবে রেনিশা চৈনানি সতর্ক করে বলেছেন, 'এখন রুপো অতিমূল্যায়িত। যদি দামের উত্থান অব্যাহত থাকে, তাহলে এটি বুদবুদের রূপ নিতে পারে।'