শীতে আগের বছরের জ্যাকেটটা আলমারি থেকে বের করে পরলেন। পকেটে হাত দিতেই ভাঁজ করা অবস্থায় একটি ৫০ টাকার নোট বের হল। অনেকের সঙ্গেই এমনটা হয়েছে। এবার ধরুন টাকার পরিমাণটা কয়েক হাজার বা লাখ টাকা হত? ভাবছেন পকেটে এত টাকা! হেঁয়ালি নয়, আসলে এমনটা হতে পারে আপনার সঙ্গেও। বিষয়টি একটু খোলসা করা যাক।
ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেটা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত, সারাদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে মোট ৭৮,২১৩ কোটি টাকার আমানত পড়ে আছে। 'পড়ে আছে' কেন বলা হচ্ছে? কারণ এই বিপুল পরিমাণ টাকার কোনও দাবিদারই নেই। বছরের পর বছর এমন দাবিহীন টাকার অঙ্ক বেড়েই চলেছে।
এই সমস্যা নতুন নয়। এর আগে ২০২৩ সালে রিজার্ভ ব্য়াঙ্ক একটি পদক্ষেপও নিয়েছিল। UDGAM(আনক্লেমড ডিপোজিট-গেটওয়ে টু অ্যাক্সেস ইনফরমেশন) নামের একটি পোর্টাল চালু হয়। এই একটি পোর্টালের মাধ্যমেই এক জায়গায় সমস্ত ব্যাঙ্কে কোথায় কার কত টাকা দাবিদারহীন অবস্থায় পড়ে আছে তা জানা যায়।
এখনও পর্যন্ত দেশের ৩০টি ব্যাঙ্ক এই পোর্টালের সঙ্গে কানেক্টেড। এই ৩০ টি ব্যাঙ্কেই দাবিহীন টাকার ৯০% জমে আছে।
দেশের তাবড় ব্যাঙ্ক, যেমন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI), পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB), সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, ধনলক্ষ্মী ব্যাঙ্ক, ডিবিএস ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া এবং সিটিব্যাঙ্ক এই পোর্টালে যুক্ত আছে।
কীভাবে UDGAM পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করবেন?
1. প্রথমত, UDGAM পোর্টাল udgam.rbi.org.in-এ যান।
২. ক্লেইম অ্যামাউন্ট সেকশনে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
৩. রেজিস্ট্রেশনের জন্য আপনার মোবাইল নম্বর এবং নাম দিন।
৪. পাসওয়ার্ড সেট করুন এবং ক্যাপচা কোড দিন।
৫. এরপর আপনার মোবাইল নম্বরে একটি OTP আসবে। সেটা দিয়ে ভেরিফিকেশন সারুন।
৬. এরপর আপনার নাম, মোবাইল নম্বর লিখে একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারবেন।
৭. মোবাইল নম্বর, পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন।
৮. পোর্টালে আনক্লেইমড অ্যামাউন্ট ট্র্যাক এবং ক্লেইম করতে পারবেন।
কী কী নথি লাগবে?
ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টধারীর নামের সঠিক বানান লিখতে হবে। এছাড়াও, প্যান, ভোটার আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর বা যেকোনও একটি জন্ম প্রমাণ লাগবে। এই তথ্যাদি জমা দেওয়ার পরে, আপনি সার্চ অপশনের মাধ্যমে আপনার নামে দাবিহীন আমানত দেখতে পারবেন।
কিন্তু এই আনক্লেইমড অ্যামাউন্ট আসে কোথা থেকে?
বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বার্ষিক ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট রিভিউ করে। এতে, কোন কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনও লেনদেন হয়নি তা জানা যায়। গত ১০ বছরে যদি কোনও অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা জমা বা তোলা না হয়, তখন সেটা আনক্লেমড অ্যামাউন্ট বলা হয়। ব্যাঙ্ক প্রথমে এই বিষয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। তারপরেও যদি সেই অ্যাকাউন্টের কেউ দাবিদার না মেলে, সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক RBI-কে সেই বিষয়ে জানায়। এর পরে, এই টাকা আমানতকারী শিক্ষা ও সচেতনতা তহবিলে (DEAF) ট্রান্সফার করা থাকে।