সাধারণভাবে কোনও গ্রাহক যখন গাড়ি কিনতে শো-রুমে যান তখন সমস্ত কর্মচারীরা খুশি হয়ে পড়েন। কারণ তাদের একজন গ্রাহক এসেছেন। যাকে বাইক বেচলে কিছু কমিশনও মিলবে। মাসের টার্গেটও ফুলফিল হবে।যদিও কিছু কিছু গ্রাহক খুশির সঙ্গে কর্মচারীদের বিপাকেও ফেলেন। তামিলনাড়ুর এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে। যার মধ্যে গ্রাহক নিজের পছন্দের বাইক কিনতে শোরুমে পৌঁছে শোরুম কর্মীদের ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু কী এমন ঘটলো?
এক গ্রাহক ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দামের একটি বাইক কিনতে শো-রুমে যান। কিন্তু তিনি যখন পেমেন্ট করতে যান, তখন মাথায় হাত পড়ে যায় শোরুম কর্মীদের। আসলে গ্রাহকের কাছে ছিল ১ টাকার কয়েন। ২ লক্ষ ৬০ হাজার ১ টাকার কয়েন গুনতে হবে ভেবেই গাড়ি বেচবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দেন কর্মীরা। কিন্তু গ্রাহক বলে কথা! তাকে কি ফেরানো যায়? শেষমেষ টাকা গোণার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
ভ্যানে করে ১ টাকার কয়েন নিয়ে আসেন ওই খদ্দের
গুণতে গুণতে দিন থেকে রাত। তামিলনাড়ুর সালেম শহরের এই ঘটনা। আম্মাপেটের গান্ধী ময়দান এলাকায় সেখানকার বাসিন্দা যুবক ভূপতি। স্থানীয় বকোল ভূপতি বাজাজ ডোমিনার ৪০০ সিসি বাইক কিনতে শোরুমে যান। এ জন্য তিনি এক এক টাকা করে জমা করেছিলেন গোটা টাকা। তিনি বাইকের দাম অনুযায়ী কয়েন জমা করতে তিন বছর লাগিয়েছেন। এরপরই তিনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে গত সপ্তাহের শনিবার। মিনি ভ্যানে করে ওই কয়েনের পোটলা নিয়ে হাজির হন শোরুমে। প্রথমে তিনি কয়েনগুলি গাড়ি থেকে নামাননি। দরদাম চূড়ান্ত হওয়ার পর যখন পেমেন্ট করার সময় আসে, তখন ভ্যান থেকে নামিয়ে আনেন তার পাহাড়প্রমাণ কয়েনের বোঝা। শো-রুমের ম্যানেজার জানিয়েছেন, তাঁর কর্মচারীদের ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে, এমনকী শোরুম বন্ধ হওয়ার পরেও গণনা শেষ হয়নি।
কীভাবে কাস্টমার এই ড্রিম বাইকের পয়সা জমা করলেন?
ভূপতি নিজে কোম্পানির কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করেন। তিনি এছাড়া নিজের ইউটিউব চ্যানেল চালান। সেখানে ভিডিও লোড করতে থাকেন তিনি। ভূপতি জানিয়েছেন যে, যখন তিনি তিন বছর আগে একটি বাইক পছন্দ করেন তখন বাইকটির দাম দু'লাখ টাকার কাছাকাছি ছিল। যদিও তখন তার কাছে এত টাকা ছিল না। তিনি এই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তখন থেকেই টাকা জমাতে শুরু করেন। নিজের সেভিংসকে কয়েনে বদলে দিতে খুচরো আনতে শুরু করেন। এছাড়া তিনি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় ব্যাংকে গিয়ে খুচরো তে পরিণত করতে শুরু করেন।
তিন বছরের আয়কে কীভাবে করলেন কনভার্ট?
ভূপতি টাকার নোটগুলিকে ১১ টাকার কয়েনে বদলে দিতেও তাকেও কম মেহনত করতে হয়নি। তিনি মন্দির, হোটেল এবং চায়ের দোকানে গিয়ে তার নিজের নোট বদলে এসেছেন। ছুটির দিনে তার কাজই ছিল বিভিন্ন জায়গায় খুচরো পয়সা সংগ্রহ করা। এভাবে তার কাছে এক এক টাকার কয়েন ভর্তি হয়ে যায়। যখন তার কাছে পছন্দের বাইকের অন রোড প্রাইস সমান জমা হয়ে যায়, তখন তিনি বাজাজের শোরুমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যদিও শোরুমের ম্যানেজার শুরুতে পেমেন্ট নিতে অস্বীকার করেছিলেন। পরে তিনি স্বীকার করেন এবং এভাবেই অদ্ভুতভাবে তার নিজের স্বপ্নের বাইক বাড়িতে নিয়ে আসেন।