এ এক স্বপ্নের গল্প। এ এক স্বপ্নকে বুকে বাঁচিয়ে রাখার গল্প। এ এক স্বপ্নকে তিলতিল করে বড় করে তোলার গল্প।
যাদবপুরের কিসসা
যাদবপুরে এক ব্যক্তি চায়ের দোকান খুলেছেন। খুলতেই পারেন। একজন নিজের রুটিরুজির ব্যবস্থা করবেন, এ তো ভাল কথা। কিন্তু ভদ্রলোকের বয়স যদি ৬৫ বছর হয়? একটু ভাবতে হয়। এই বয়সে নিজের দোকান! কুর্নিশ জানাতে হয়। এরপর যদি জানা যায়, সেই দোকান খোলার অর্থ দিয়েছেন তাঁর মেয়ে। তিনি পেশায় অভিনেত্রী। বেশ কিছুদিন ধরে টাকা জমাচ্ছিলেন সেই দোকান করার জন্য। আবার নিজের প্রবল ব্যস্ততার মাঝেও যখন সময় পান, তখন লেগে পড়েন বাবার হাতে হাতে কাজে। তখন তাঁদের সাহস, চেষ্টা, তাগিদ, উদ্য়োগকে ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা কারও থাকে না। মুগ্ধ হয়ে শুনতে হয় তাঁদের কথা।
মেয়ে জানাচ্ছেন
বিনীতা গুহ যেন বাবাকে চায়ের দোকান উপহার দিয়েছে। সেই দোকান খোলার কাজে সাহায্য করেছেন। সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাঁদের এই কীর্তি। অজস্র মানুষ তারিফে ভরিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি এতে বিশেষ কৃতিত্বের কিছু দেখছেন না। তিনি যে নজির তৈরি করেছেন, মানতে চান না।
তিনি বলেন, আগের বছর থেকে বাবার কাজকর্ম ছিল না। যেখানে কাজ করতেন, সেখানে বসিয়ে দেওয়া হয়। আমি অভিনয় করি। সামান্য রুজি থেকে সব খরচ। বাড়ি ভাড়া থেকে যাবতীয় জিনিসের জোগান। বাবার ইচ্ছা ছিল ছোটখাট ব্যবসা বা চায়ের দোকান করার। অবেশেষ তা করা গিয়েছে।
বিনীতা বলেন, একটু একটু করে টাকা জমিয়েছি। অযথা টাকা খরচ করি না। বছর দেড়েক ধরে জমিয়ে জমিয়ে দোকান খোলা গিয়েছে।
করোনার ধাক্কা
গত বছর মানে ২০২০ সালে আরও অনেকের মতো তাঁদের জীবনও এক লহমায় বদলে গিয়েছিল। করোনা, লকডাউনের কারণে তাঁর বাবা সুখেন গুহ কাজ হারিয়েছিলেন। তিনি সেলসের কাজ করতেন। কী করে সামলে উঠতে পারব? আরও অনেকের মতো তাঁরাও পড়েছিলেন একই প্রশ্নে। বিনোদন জগৎ ধাক্কা খেয়েছিল একই কারণে। ফলে প্রভাব পড়েছিল বিনীতার আয়েও।
তাঁর অভিনয় শুরু থিয়েটার দিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে কনফিউজড পিকচার-এর একটি ওয়েব সিরিজে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এর পাশাপাশি আরও কাজও করছেন।
হাওড়ায় বাড়ি, দোকান যাদবপুরে!
তাঁরা আগে থাকতেন হাওড়ার সালকিয়ায়। যাদবপুরে শিফ্ট করেছেন, মাস দুয়েক হবে। আর তাই যাদবপুরে দোকান। হাওড়া থেকে কাজের জন্য যাতায়াতে অনেকটা সময় চলে যেত। তাই এদিকে চলে এসেছেন।
সকাল সকাল চায়ের কাপ
দোকান খুলে যায় সকাল ৬টার মধ্যে। চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। সকালে চা ছাড়াও থাকে ক্লাব কচুরি, মুড়ি-ঘুগনি। আর বিকেলে খোলে সন্ধে ৬টা নাগাদ। তখন চা, মুড়ি-ঘুঘনি। পঞ্চমী থেকে শুরু হয়েছে ওই দোকান। যাদবপুরের শক্তিগড়ের মাঠের কাছে।
বিনীতা বলেন, দোকান ভাড়ায় নিয়েছি। বাড়ি থাকলে আমিও কাজ করি দোকানের। ঘরে রান্না করে দিই। ইচ্ছে আছে পুজোর পর ডিমসেদ্ধ, আমলেটও তৈরির করার।
করোনা বদলে দিয়েছিল তাঁদের জীবন। অনেক সংশয় তৈরি করেছিল। এবার যেন পাল্টা দেওয়ার পালা!
"তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।"
এ এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার গল্প।