
লন্ডনে বিলাসবহুল পার্টি। হাসি, ঠাট্টা, সেলিব্রেশন। আর তার মাঝেই এমন এক মন্তব্য, যা শুনে চমকে উঠছেন বহু ভারতীয়। সদ্য প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিওতে প্রাক্তন আইপিএল চেয়ারম্যান ললিত মোদী ও পলাতক শিল্পপতি বিজয় মাল্যকে একসঙ্গে পার্টি করতে দেখা গিয়েছে। ভিডিওতে ললিত মোদীকে শোনা যাচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক সুরে বলতে, তিনি এবং মাল্যই নাকি 'ভারতের সবচেয়ে বড় পলাতক'! এই মন্তব্যকে অনেকেই ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সরকারের প্রতি প্রকাশ্য উপহাস বলেই দেখছেন।
ভিডিওটি নিজেই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন ললিত মোদী। ক্যাপশনে লেখা, 'Let’s break the internet down in India again. Happy birthday my friend #VijayMallya. Love u।' অর্থাৎ, ভারতীয় নেটদুনিয়ায় ফের ঝড় তোলার আহ্বান। সঙ্গে বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা। এই পোস্ট ঘিরেই নতুন করে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, বছরের পর বছর ধরে ভারত সরকার ললিত মোদী ও বিজয় মাল্যকে দেশে ফেরাতে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ সেই দুই অভিযুক্তই বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে নির্ভার আনন্দে মেতে উঠছেন; এবং সেই ছবি, ভিডিও নিজেরাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজমাধ্যমে।
উল্লেখ্য, ললিত মোদী ২০১০ সালে আর্থিক অনিয়ম, বিড রিগিং ও অর্থপাচারের অভিযোগের মুখে ভারত ছাড়েন। অন্যদিকে কিংফিশার এয়ারলাইন্স ধসে পড়ার পর, প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত বিজয় মাল্য ২০১৬ সালে দেশ ছেড়ে পালান। তারপর থেকে দু’জনেই যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। বিজয় মাল্য এখনও ভারত সরকারের প্রত্যর্পণ আবেদনের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন।
এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার লন্ডনে একসঙ্গে পার্টি করার ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন ললিত মোদী। চলতি মাসের শুরুতেই বিজয় মাল্যর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে এক বিলাসবহুল পার্টির আয়োজন করেছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানের ছবি ও বিবরণও সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নেন ললিত মোদী। মাল্যকে ‘King of Good Times’ বলে সম্বোধন করে তিনি লেখেন, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উড়ে এসে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
সেই পার্টির অতিথি তালিকাও কম চমকপ্রদ নয়। সূত্রের খবর, সেখানে উপস্থিত ছিলেন বায়োকনের কর্ণধার কিরণ মজুমদার-শ, হলিউড অভিনেতা ইদ্রিস এলবা এবং ফ্যাশন ডিজাইনার মনোভিরাজ খোসলা। আলোকচিত্রী জিম রাইডেলও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করে ললিত মোদীকে ধন্যবাদ জানান এমন ‘ফ্যাবুলাস’ পার্টির জন্য। এই সব ছবি ভাইরাল হতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে; যাঁরা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে, তাঁরা কীভাবে এমন প্রকাশ্য উদ্যাপনে মেতে উঠতে পারেন?
সমাজমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এক নেটিজেনের মন্তব্য, 'ভারত সরকারকে নিয়ে কী ভয়ংকর উপহাস!' রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলেও এই ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ছে বলে মত পর্যবেক্ষকদের। কারণ, প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া যখন এখনও আইনি জটিলতায় আটকে, তখন এই ধরনের প্রকাশ্য উৎসব ভারতের আইনব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।
তবু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে পলাতক থাকার পরেও যদি অভিযুক্তরা এমন নির্ভয়ে আনন্দ উদ্যাপন করতে পারেন, তবে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার সাফল্য কোথায়? লন্ডনের পার্টির হাসির আড়ালে কি ভারতের আইনি লড়াই নিয়েই ব্যঙ্গ লুকিয়ে আছে? এই ভিডিও ও ছবিগুলি শুধু ব্যক্তিগত উদ্যাপন নয়, নাকি গোটা ব্যবস্থার প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ; সেই বিতর্কই এখন দানা বাঁধছে।