
'কিরিশ কা গানা সুনেগা?' একটি ছোট্ট সংলাপ। অথচ এই লাইনটাই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডসেটার। রিল, মিম, রিমিক্স, নেটদুনিয়ায় সর্বত্রই ঘুরে বেড়াচ্ছে এই অডিওর নানা সংস্করণ। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এই ভাইরাল লাইনের শুরু কোথায়? আর ভিডিওতে দেখা মানুষটিই বা কে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে পৌঁছতে হয় ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরে। সেখানকারই বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী পিন্টু প্রসাদ, যিনি আজ নেটদুনিয়ায় পরিচিত ‘ভাইরাল ধুম বয়’ নামে।
কঠিন জীবন, সহজ হাসি
পিন্টুর জীবন মোটেও সহজ ছিল না। খুব অল্প বয়সেই বাবা-মাকে হারান তিনি। পারিবারিক সহায়তা বলতে ছিল মূলত তাঁর বোন, যিনি হয়ে ওঠেন তাঁর জীবনের প্রধান ভরসা। জীবিকার তাগিদে কখনও আবর্জনা কুড়িয়েছেন, কখনও টয়লেট পরিষ্কার করেছেন, এমনকি মৃত প্রাণী সরানোর কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। তবু জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও তাঁর মুখে লেগে ছিল একরাশ প্রাণখোলা হাসি। পিন্টু নিজেই জানিয়েছিলেন, ছোটবেলায় পেট ভরানোর জন্য তাঁকে শৌচালয় পরিষ্কার পর্যন্ত করতে হয়েছে।
ভাইরাল মুহূর্ত
সবকিছু বদলে যায় এক অনিচ্ছাকৃত ভিডিওতেই। ক্যামেরার সামনে হঠাৎই পিন্টু বলে ওঠেন, 'কিরিশ কা গানা সুনেগা… লে বেটা!' তারপরই হৃতিক রোশনের ছবি ‘কৃষ’-এর জনপ্রিয় গান ‘দিল না দিয়া’ গাইতে গাইতে শুরু করেন, সঙ্গে থাকে তাঁর নিজস্ব ‘ধুম-স্টাইল’ নাচ। এই প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স মুহূর্তেই নেটদুনিয়ায় ঝড় তোলে। 'লে বেটা, কিরিশ কা গানা সুনেগা!' এই সংলাপ হয়ে ওঠে হাজার হাজার রিলের মূল সুর।
খ্যাতির আলো ও অন্ধকার
ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসে পরিচিতি, কিন্তু তার পাশাপাশি আসে সমস্যাও। অনেকেই পিন্টুর সরলতার সুযোগ নেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কনটেন্ট বানিয়েও ন্যায্য পারিশ্রমিক পাননি তিনি। আসক্তির সঙ্গে লড়াইও চলছিল সমানতালে।
অস্তিত্ব ফাউন্ডেশনের হাত ধরে নতুন পথ
ঠিক এই সময়েই পিন্টুর জীবনে আশার আলো জ্বালায় জামশেদপুরের অস্তিত্ব ফাউন্ডেশন। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সৌরভ তিওয়ারি ও তাঁর দল পিন্টুর পাশে দাঁড়ান। শুরু হয় চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নতুন জীবনের প্রস্তুতি। এখন পিন্টু ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে।
নেটদুনিয়ার প্রিয় মুখ
আজ পিন্টুর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট @viralboydhoom-এ ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৭৩ হাজার। অনেকেই লক্ষ্য করেন, বয়সের তুলনায় তিনি বেশ তরুণ দেখান। তাঁর এই শিশুসুলভ প্রাণশক্তি আর সরলতা ভক্তদের মন জয় করেছে।
ভাইরালের আড়ালে মানুষ
পিন্টু প্রসাদের গল্প মনে করিয়ে দেয়, একটি ভাইরাল ভিডিওর পিছনেও থাকে একজন মানুষের সংগ্রাম, কষ্ট আর বেঁচে থাকার লড়াই। তার গল্প শুধু হাসায় না, ভাবতেও শেখায়, ভাইরাল ট্রেন্ডের আসল সার্থকতা তখনই, যখন তা কোনও মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।