Advertisement

Inspiring Story: ভোরে প্র্যাকটিস, দুপুরে দিনমজুরি, আর্মির ম্যারাথনে বাজিমাত পরিযায়ী শ্রমিকের

৩২ বছরের রোহিত কুমার আজ দেশের ক্রীড়ামঞ্চে নবতম নক্ষত্র। সম্প্রতি হিমাচলের স্পিতিতে আয়োজিত ৭৭ কিলোমিটারের কুনজুম লা কাজা আল্ট্রা ম্যারাথনে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন তিনি।

লড়াইয়ের অপর নাম রোহিত কুমার। ছবি: ভারতীয় সেনালড়াইয়ের অপর নাম রোহিত কুমার। ছবি: ভারতীয় সেনা
Aajtak Bangla
  • স্পিতি,
  • 13 Sep 2025,
  • अपडेटेड 11:00 AM IST
  •  বিহারের খাগাড়িয়ার গরিব পরিবারের ছেলে রোহিত।
  • ৩২ বছরের রোহিত কুমার আজ দেশের ক্রীড়ামঞ্চে নবতম নক্ষত্র।
  • ২০২০ সালে লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টোকিওর ম্যারাথন দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হন।

Inspiring Story: বিহারের খাগাড়িয়ার গরিব পরিবারের ছেলে রোহিত। দিল্লির বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন সাইটে দিনমজুরির(Daily Labourer) কাজ করেন। মাথায় ৮, ১০টি ইট তুলে সিঁড়ি বেয়ে চার, পাঁচ তলায় পৌঁছে দেন। মজুরির অঙ্ক ঠিক হয় দিনে কতবার ইট তুললেন তার উপর। বাড়তি আয়ের জন্য বেশি বেশি করে ইঁট তোলেন রোহিত। এই হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে দিনে আয় হয় হাজার, বারোশো টাকা। সেই আয়েরই প্রায় সবটাই চলে যায় স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।রোহিতের স্বপ্ন, অলিম্পিকে ভারতের হয়ে দৌড়নো।

পৌনে আট ঘণ্টার মধ্যেই ৭৭ কিলোমিটার! 
৩২ বছরের রোহিত কুমার আজ দেশের ক্রীড়ামঞ্চে নবতম নক্ষত্র। সম্প্রতি হিমাচলের স্পিতিতে আয়োজিত ৭৭ কিলোমিটারের কুনজুম লা কাজা আল্ট্রা ম্যারাথনে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন তিনি। কঠিন পাহাড়ি পথ, প্রচণ্ড ঠান্ডা, অক্সিজেনের অভাব, সবকিছুকে হার মানিয়ে মাত্র ৭ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটে শেষ করেছেন দৌড়। সেনার উত্তর ভারত শাখা তাঁর লড়াইকে সম্মান জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছে, 'কোনও কোচ নেই, দামি জুতোও নেই। আছে শুধু এক অদম্য জেদ। ওঁর কাছে ফিনিশ লাইন মানে শুধু মেডেল নয়। রোহিতের কাছে ফিনিশ লাইনের অর্থ অলিম্পিকের স্বপ্নের আরও এক ধাপ কাছাকাছি পৌঁছনো।'

YouTube দেখে দৌড়ানো শুরু
বর্তমানে রোহিতের জীবনটাই যেন দৌড়ের সঙ্গে বাঁধা। তবে শুরু থেকে কিন্তু এমনটা ছিল না। ২০২০ সালের কথা, লকডাউনে ইউটিউব ঘাঁটছিলেন রোহিত। সেই সময়েই লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টোকিওর ম্যারাথন দেখে ভীষণ অনুপ্রাণিত হন। ভাবেন, আমিও তো এমন দৌড়তে পারি! বেশ মজার ব্যাপার তো!

যেমন ভাবা, তেমন কাজ। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অল্প দূরত্ব দৌড়ানো শুরু করেন। ভোর সাড়ে তিনটেয় উঠে জামা, জুতো পরে বেরিয়ে পড়েন। চারটে নাগাদ কাছের একটি মাঠে গিয়ে দৌড় শুরু করেন। বেশ কয়েক ঘণ্টা বিভিন্ন স্পিডে, দূরত্ব মেপে দৌড়ান। দিন দিন ক্রমেই দৌড়ের দূরত্ব ও গতি বাড়াতে থাকেন।

দৌড় সেড়ে দিনমজুড়ি, বাড়ি ফিরে সাঁতার, ব্যায়াম

ছবি: এক্স

তবে শুধু দৌড়ালেই তো হবে না! কাজও তো করতে হবে। তাই কয়েক ঘণ্টা দৌড় সেরেই বাড়ি ফিরে স্নান করে চলে যান লেবারের কাজ করতে। সেখানে গিয়েও গরম, রোদের মধ্যে সারাদিন অমানুষিক পরিশ্রম। তারপর বাড়ি ফিরে কোনও কোনওদিন সাঁতার বা হালকা শরীরচর্চা, স্ট্রেচিং। এভাবেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চুপিসাড়ে নিজেকে গড়তে থাকেন রোহিত।

খাওয়ার খরচই প্রচুর
লম্বা দূরত্বে দৌড়ালে শরীরের অনেক বেশি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফল, বাদাম, প্রোটিনও খেতে হয়। তাই সাধারণ মানুষের তুলনায় খাওয়ার খরচও ৩-৪ গুণ বেশি। সেই বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিত জানালেন, 'নিজেই বাজার, রাননা করি। প্রতি মাসে ত্রিশ হাজার টাকা মতো আয় করি। তার মধ্যে কুড়ি হাজারই চলে যায় প্র্যাকটিস আর ডায়েটে।'

Advertisement

আজ অবধি ১০০ রও বেশি ম্যারাথনে দৌড়েছেন রোহিত। মাসে গড়ে পাঁচটি ম্যারাথন। শুধু গত ছ’মাসেই সাতটিরও বেশি প্রতিযোগিতায় প্রথম তিনের মধ্যে ছিলেন।

মুগ্ধ সেনা কর্তারা
তবে স্পিতি ভ্যালিতে আর্মির ম্যারাথনের এই সাফল্য আলাদা। প্রথমত এটি আর্মির আয়োজিত। দ্বিতীয়ত ৭৭ কিলোমিটারের আলট্রা ম্যারাথন। সাধারণ ম্যারাথনের তুলনায় দেড়গুণ বেশি দূরত্ব। সেখানে ওঁর এই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ আর্মি কর্তারা। এবার তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অরুণাচলের তাওয়াং এর আরও এক ম্যারাথনে। ভারতীয় সেনাই তাঁর যাতায়াত, খাওয়া, থাকার দায়িত্ব নেবে বলে জানিয়েছে। পুরো বিষয়টিতে আবেগে আপ্লুত। সেই সঙ্গে বেশ আত্মবিশ্বাসীও। তাওয়াং এও প্রথম তিনে শেষ করবেন বলে আশাবাদী তিনি।

একটা জুতোই ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা!
সাফল্যের পথটা মোটেও সহজ ছিল না। রোহিত জানান, বড় প্রতিযোগিতায় জুতোই কাউকে অনেকটা এগিয়ে দিতে পারে। তাই আধুনিক প্রযুক্তির ভাল জুতো কিনতে হয়। অ্যাডিডাস, নাইকি, ব্রুকস, নিউ ব্যালেন্স জাতীয় কোম্পানির স্পেশাল জুতো সেগুলি। এক একটির দামই ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর সেই জুতো দু’‌তিনটি ম্যারাথন দৌড়লেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতিবার বড় কম্পিটিশনের আগে জুতো কিনতে হয়। তাছাড়া রোজের প্র্যাকটিসের জন্যও কয়েক সপ্তাহ অন্তরই জুতো কিনতে হয়। সাধারণত প্র্যাকটিস শু ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার চলে। তারপরই তার ফোম, কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।

'একদিন না একদিন পারবই'
রোহিত জানালেন, অলিম্পিকে নাম দেওয়ার যোগ্যতা অর্জনের জন্য তিনি এখনও ছ’ মিনিট পিছিয়ে। অর্থাৎ, তাঁকে আরও দ্রুত দৌড় শেষ করতে হবে। তবে সেটা করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী রোহিত। বললেন, 'একদিন না একদিন পারবই। আজ যদি মানুষ আমার পাশে থাকেন, তাহলে ছয় মাসেই সেই সময় এগিয়ে নিয়ে আসতে পারব। তা না হলে অন্তত বছরখানেক লাগবে।' 

একসময় মেধাবী ছাত্রও ছিলেন রোহিত। কিন্তু গরিব পরিবারের হাল ধরতে ভিনরাজ্যে দিনমজুরির কাজে আসতে বাধ্য হন। রোহিত বললেন, 'ইনকাম শুরু করতেই বাড়ি থেকে বলছিল এবার বিয়ে শাদি করে নে। কিন্তু আমি বললাম আমাকে তোমরা ১০ বছর সময় দাও।'

আজ নিজের জেদ, পরিশ্রম ও দৌড়ের প্রতি ভালবাসা দিয়েই নিজের স্বপ্নকে ইন্ধন জোগাচ্ছেন রোহিত কুমার। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তিনি এখন অনুপ্রেরণাস্বরূপ।

Read more!
Advertisement
Advertisement