আতঙ্কের অপর নাম শিলিগুড়ির নার্সিংহোম
স্বাস্থ্য সাথী কার্ড গ্রহণ না করা ও অত্যাধিক টাকা নেওয়ার অভিযোগে শিলিগুড়িতে শো কজ করা হল শিলিগুড়ির একাধিক নার্সিংহোমকে। যা নিয়ে রীতিমতো সন্ত্রস্ত নার্সিংহোমগুলি। তারা স্বাস্থ্য দফতরের শো কজে অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও তারপরও নতুন করে ফের অনেকগুলি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে।
অগুনতি অভিযোগে জেরবার স্বাস্থ্য দফতর
বেশ কয়েকদিন আগে ভক্তিনগর এলাকার একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে মোটা টাকা বিল করে এক রোগীর মাকে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। ডুয়ার্সের বাসিন্দা ওই যুবক তাঁর সর্বস্ব বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েছে জানানোর পরও মাকে ছাড়া হয়নি। তিনি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছিলেন। এরপর প্রধাননগরের অন্য একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে মোটা টাকার বিনিময়ে বেড বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বেড থাকতেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেককে। সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তিনদিন আটকে রেখে কোনও চিকিৎসা না করানোর অভিযোগ ওঠে।
স্বাস্থ্য কর্তারাও কাঠগড়ায়
হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলির সঙ্গে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের করণকেও। এরপরই খানিকটা প্রকাশ্যে নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নিয়ম না মানায় শিলিগুড়ির ৮ টি নার্সিংহোমকে শো-কজ করল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। গত একমাসে এই নার্সিংহোমগুলি শো-কজ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতিমধ্যে অধিকাংশ নার্সিংহোম শো-কজের উত্তর পাঠিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে। বেশিরভাগই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মেনে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা পালন করতে রাজি হয়েছে। এমন অভিযোগ যাতে আর না ওঠে, সে বিষয়টি দেখা হবে বলে তাঁরা মুচলেকা দিকে রাজি হয়েছেন।
প্রশাসক বোর্ডের হস্তক্ষেপ
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় গোটা দেশে যখন ক্রমশ পরিস্থিতির জোরালো হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি নার্সিং হোম গুলি চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর পরিবারগুলিকে মোটা টাকার বিল ধরাচ্ছে। প্রচুর দুঃস্থ পরিবার এই বিল মেটাতে রীতিমতো ঘটিবাটি বিক্রি করে ফেলেছে। তবে শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বেসরকারি নাসিংহোমগুলির বিরুদ্ধে লাগাম টানতে তৎপর শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব। দফায় দফায় বেসরকারি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিলিগুড়ি পুর নিগমের বৈঠকও করেছেন।
৮ টি নার্সিংহোমকে শো-কজ
এই বৈঠক থেকে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য সাথী কার্ড গ্রহণ করতে হবে প্রত্যেক নার্সিংহোমকে। এবং কোন রোগীর পরিবারকে ধনে প্রাণে মারা যাবে না। তবে এ বৈঠকেই শিলিগুড়ি শহরের বেশ কিছু বেসরকারি নার্সিংহোম সরকারের নির্দেশিকাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোগীর কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে। তবে এবার এই সমস্ত নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করল দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে গত একমাসে শিলিগুড়ি শহরের ৮ টি বেসরকারি নার্সিংহোমেকে শো-কজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শো-কজের উত্তর পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরে।
সিএমওএইচ এর বক্তব্য
দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, শিলিগুড়ির ৭-৮ টি নার্সিংহোমকে শো-কজ করা হয়েছে এবং এদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড গ্রহণ না করা, অত্যধিক বিল নেওয়া এবং পরিষেবা সংক্রান্ত বহু অভিযোগ রয়েছে। তবে অধিকাংশ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শো-কজের উত্তর দিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলি ছিল, তাঁরা মেনে নিয়েছে এবং কেউ কেউ তাদের যে খামতিগুলি ছিল সেগুলিকে ঠিক করে নিয়েছে।
জেলাশাসকের বক্তব্য
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক পুনমবালাম এস জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল। সেই মতো জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তদন্ত করে নার্সিংহোমগুলিকে শোকজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।