উত্তরবঙ্গ (North Bengal), বিশেষত কোচবিহার (Coochbehar), আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জল বায়ু মাটিতে মিশে রয়েছে ভাওয়াইয়া গান (Bhawaiya Song)। মানুষের গলায় গলায় শোনা যায় ভাওয়াইয়ার মন কাড়া সুর। এই ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি নিয়ে অবশ্য মতভেদ রয়েছে। লোক গবেষকদের একাংশের মতে 'ভাওয়া' শব্দ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভাওয়াইয়া। 'ভাওয়া' শব্দের অর্থ গোচারণভূমি। অর্থাত গোচারণভূমিকে কেন্দ্র গড়েই সৃষ্টি এই গানের। কেউ আবার মনে করেন ভাব অর্থাত মনের অনুভূতি থেকে তৈরি হয়েছে ভাওয়াইয়া। আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, প্যারিমোহন দাস, নায়েব আলি, সুরেন বসুনিয়ার মতো শিল্পীদের সুরেলা কণ্ঠে ভর করে এই গান পৌঁছে গিয়েছে বিশ্বের দরবারে। কিন্তু যুগ বদলেছে। পালটেছে মানুষের রুচি। আর এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কতটা নিজস্বতা ধরে রাখতে পেরেছে বাংলা লোকগানের এই বিশেষ ধারা? কেমনই বা আছেন ভাওয়াই শিল্পীরা?
ভাওয়াইয়া গানের বিখ্যাত শিল্পী ধনেশ্বর রায় কার্যত জানাচ্ছেন, "বর্তমান সময়ে চটুল গানের বাড়বাড়ন্তে কোথাও যেন পিছিয়ে পড়েছে ভাওয়াইয়া গান। হারিয়ে যাচ্ছে সেই মূল্যবান কথা, মন উদাস করা সুর।" এমনকি সরকার তথা প্রশাসনও এই গানকে বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি বলেই আক্ষেপ পড়ল তাঁর গলায়। তাহলে যে লোকশিল্পীদের জন্য সরকার বিশেষ পরিচয় পত্র ও ভাতা চালু করেছে? ধনেশ্বরবাবুর উত্তর, "তাতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়েছে। যাঁরা সত্যিকারের শিল্পী তাঁরা হয়ত কার্ড পেয়েছেন, আবার বঞ্চিতও হয়েছেন। কোনও লাভ হয়নি।"
আরও এক ভাওয়াইয়া শিল্পী মহম্মদ আবদুল হামিদ জানাচ্ছেন, "সরকারের দেওয়া ১ হাজার টাকায় কোনও রকমে চলে।" তাঁর আরও দাবি, "রাজ্যের এক মন্ত্রী চাকরি দেবেন বলেছিলেন, কিন্তু দেননি।" শিল্পী মনে করেন, "ভাওয়াইয়া গান নিয়ে সরকারের আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত।" একই সঙ্গে সরকারের কাছে তাঁর আবেদন, "ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাদউদ্দীন আহমেদের বাড়িটিকে সংস্কার করে ভাল প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হোক, যাতে সেখানে বাইরে থেকে শিল্পীরা আসেন।" বাড়িটিকে কেন্দ্র করে অতিথি নিবাস তৈরির আবেদনও জানাচ্ছেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি ও রাজবংশী ডেভলপমেন্ট এন্ড কালচারাল বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন জানান, আব্বাদউদ্দীন আহমেদের বাড়িতে ভাওয়াইয়া অ্যাকাডেমি করার আবেদন জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলেই জানান বংশীবদনবাবু।