দল আছে। দলে কর্মীও আছে। সমর্থক যে শূন্য হয়ে গিয়েছে তাও নয়। তবে তিনি এখন কোণঠাসা। তিনি সুভাষ ঘিসিং পরবর্তী যুগের একদা পাহাড়ের একচ্ছত্র সম্রাট বিমল গুরুং। তাঁর সঙ্গে থাকা এক সময়ের সহযোদ্ধারা একে একে সঙ্গ ছেড়ে বিভিন্ন দলে নাম লিখিয়েছেন। কেউ নতুন দল গড়েছেন। এমনকী একসময়ে তাঁর প্রধান বিরোধীরাও প্রথম সারিতে চলে এসেছেন। অথচ তিনি বিমল গুরুং এখন ধীরে ধীরে সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁর সঙ্গী এখন শুধু পুরনো বন্ধু রোশন গিরি।
এই পরিস্থিতিতে বিমলের কাছে দুটিই রাস্তা খোলা রয়েছে। রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিয়ে নেওয়া অথবা ফের নতুন করে সক্রিয় রাজনীতিতে ঝড় তোলা। বিমল কোনটা করবেন, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত তিনি যে বসে থাকবেন না তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন স্বয়ং বিমল নিজেই। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং নতুন করে পাহাড়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।
দলীয় সূত্রের খবর, নারী এবং যুব মোর্চাকে সামনে রেখে, সংগঠনকে সক্রিয় করতে চাইছেন গুরুং। রবিবার দার্জিলিংয়ে মালিধুরায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ছিল। সোমবার দার্জিলিং মহকুমার নারী মোর্চার নতুন কমিটি গঠন করা হয়। বসে যাওয়া অনেককে ফের রাজনীতির ময়দানে আনার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে। তবে বদলে যাওয়া পাহাড়ে তিনি কতটা সাফল্য পাবেন, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
গুরুং জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে কিছু রদবদল হচ্ছে। যুব এবং নারীদের নতুন করে একত্র করা হচ্ছে। যেই থাক দলে, দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আলাদা রাজ্যই যে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র অবলম্বন, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি।
আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে সমঝোতা করে জিটিএ গ্রহণ করেন।২০১৭ সালে জিটিএ থেকে সদলবলে পদত্যাগ করে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু করেন। খুন, দেশদ্রোহিতা সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলায় জডিয়ে তিনি পাহাড়ছাড়া হন। টানা সাড়ে তিন বছর বিজেপির সঙ্গে থেকেও পাহাড়ে ফিরতে পারেননি। শেষে, তৃণমূলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পাহাড়ে ফিরলেও ততদিনে পাহাড় বদলে গিয়েছে। তার ফেলে যাওয়া যায়গা দখল করে নিয়েছেন অনীত থাপা, বিনয় তামাংরা। নতুন দল গঠন করে দার্জিলিং পুরসভা দখল করে হামরো পার্টি। একের পর এক ভোটে বিমলকে কার্যত নস্যাৎ করে দেয় পাহাড়বাসী।
দেওয়াল লিখন পড়তে পেরে জিটিএ ভোটে তাই আর লড়েননি। ভোট বন্ধের দাবিতে অনশন করলেও, তাতে সাড়া পাননি। এখন ফের নতুন করে আবার আলাদা রাজ্যের কথা বলে ময়দানে নামার চেষ্টা শুরু করেছেন। তাতে কতটা লাভ হবে তা নিয়ে সন্দিহান গুরুংয়ের কিছু ঘনিষ্ঠই।