বেশ কয়েক বছর থেকেই শিলিগুড়ি মহকুমার বিহার লাগোয়া খড়িবাড়ি এলাকায় মাদকের কারবার ফুলেফেঁপে উঠছে। সন্ধ্যা হলেই এলাকার একশ্রেণির যুবক-কিশোর সম্প্রদায় মাদকের লোভে ভিড় জমাচ্ছেন মাদকের ঠেকে।
সুশীল সমাজের অভিযোগ
স্থানীয় সুশীল সমাজের তরফ থেকে বারবার অভিযোগ জমা হলেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। আগে নির্দিষ্ট দু'একটি দোকানে বিক্রি হতো এই মাদক এখন শহরের বহু প্রতিষ্ঠিত দোকানে অন্য ব্যবসার আড়ালে চলছে এই মাদক বিক্রি। লকডাউনে রুটিরুজি তলানিতে ঠেকেছে। সেই সুযোগে বিকল্প রুজির সন্ধান করতে গিয়ে সহজ পদ্ধতিতে ব্রাউন সুগার কোকেন গাজা বিক্রির মুনাফার দিকে ঝুঁকেছেন অনেকে।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা জড়িয়েছে
ইতিমধ্যেই এমনই কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর দোকানে তল্লাশি চালিয়ে বমাল তাদের গ্রেফতার করেছে খড়িবাড়ি থানার পুলিশ। বুধবার বিকেলেও এক মিউজিক সিস্টেম বিক্রির ব্যবসায়ীকে নেশাল সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও এরা সবই খুচরা বিক্রেতা মাত্র। এর পিছনে রয়েছে বিশাল চক্র, যে পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না স্থানীয় পুলিশ। ধৃত ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক হাজারেরও বেশি নেশার ইনজেকশন ও অ্যাম্পুল মিলেছে। তার আগে একটি মুদির দোকানের মালিক এবং মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের কাছ থেকেও মাদক মিলছে।
দিনভর চলছে শুকনো নেশা
মদ-গাঁজা তো এখন এখানে নেশার পর্যায়ে পড়ে না। বরং ব্রাউন সুগার, কোকেন, হাসিস, চরস, গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়েছে ইয়ং ব্রিগেড। সকাল থেকে সন্ধ্যা-রাত বিশেষ এলাকায় গেলেই নেশায় বুঁদ যুব সম্প্রদায়কে দেখা যাচ্ছে নেশাসক্ত থাকতে।
স্থানীয়দের দাবি
পানিট্যাঙ্কি ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী জানিয়েছেন, লকডাউনের জেরে সীমান্ত বন্ধ থাকছে প্রায় দেড় বছর ধরে। পানিট্যাঙ্কি মার্কেটের হাজারের উপর দোকান বন্ধ। ব্যবসা বন্ধ থাকায় অনেক দোকানের মালপত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে অনেককে। অনেক দোকানদার ভাড়া দিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু কিছু লোক দারিদ্র্য সামলাতে না পেরে বিকল্প সহজ রুজির পথ খুঁজতে গিয়ে এভাবে মাদকের কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ অবশ্য নিয়মিত তল্লাশি এবং অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশি অভিযান না চললে এরা ধরা পড়তো কীভাবে!
একদিকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও অন্যদিকে আন্ত রাজ্য সীমানা
খড়িবাড়ি পানিট্যাঙ্কি এলাকা ভারত-নেপাল সীমান্ত থাকায় এখানকার বাজার স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি নেপালের একটা বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের মূল ভরসা। প্রতিদিন প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি হাজার মানুষ নেপাল থেকে ভারতের এই অংশে পানিট্যাঙ্কি বাজারে এসে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় বেসাতি সারেন। বিহার থেকে অবশ্য যাঁরা আসেন, তাঁরা শিলিগুড়িতেই যান।তবু কিছু ব্যবসা এখানেও হয়। গত দেড় বছর ধরে সেই পরিস্থিতি নেই। ফলে ব্যবসা ব্যাপকভাবে মার খাচ্ছে। সেই জায়গা থেকেই কিছু লাভ তোলার জন্য এভাবে বিপথে চালিত হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।