Advertisement

দেবী চৌধুরানী কি সত্যিই জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন? জানুন

দেবী চৌধুরানী কি সত্যিই জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন? জানুন সত্যিটা কী। দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠককে নিয়ে নানা রকম মিথ এবং কিংবদন্তী ছড়িয়ে রয়েছে বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল আর শিকারপুরের আনাচে কানাচে।

শিকারপুরে দেবী চৌধুরানী মন্দির
সংগ্রাম সিংহরায়
  • শিলিগুড়ি,
  • 28 Mar 2022,
  • अपडेटेड 7:05 PM IST
  • দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠককে নিয়ে নানা রকম মিথ ছড়িয়ে রয়েছে
  • নানা রকম মিথ এবং কিংবদন্তী ছড়িয়ে রয়েছে
  • বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল আর শিকারপুরে এখনও ঘুরে বেড়ায় নানা রকম গল্প

ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী, এই নাম দুটো প্রতিটি বাঙালির কাছে আলাদা তাৎপর্য বহন করে।বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের মাধ্যমেই তাদের পরিচিতি। আনন্দমঠ, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যার প্রভাব অনস্বীকার্য। এই উপন্যাসেরই অবদান জাতীয় স্লোগান 'বন্দেমাতরম'। একটা উপন্যাসের কাহিনীর চরিত্র একটা জাতি, একটা সমাজকে বুঁদ করে ফেলেছিল এতটা যে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে ইল্যুশন তৈরি হয়ে যায়। আনন্দমঠ উপন্যাসে বর্ণিত প্রতিটি চরিত্রই যে জনমানসকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়া শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন হবে, তাতে আশ্চর্য কী ! সেই উপন্যাসের দুটি মূল চরিত্র ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীকে নিয়ে মিথ মানুষকে ধন্দে ফেলে দিয়েছে।

সত্যি তাঁরা ছিলেন কি না!

জলপাইগুড়ি জেলার শিকারপুর চা বাগান ঘেরা ছোট্ট গ্রামে দেবী চৌধুরানী মন্দির রয়েছে। ইতিহাস এবং কিংবদন্তি মিলেমিশে একাকার এই মন্দিরে। স্থানীয় মানুষরা মনে করেন এ দেবী চৌধুরানী, বঙ্কিমের দেবী চৌধুরানীই। এমনকী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে একটি বজরা সংরক্ষণ করা রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এটি দেবী চৌধুরানীর বজরা। যদিও সেটা নিয়ে প্রামাণ্য কোনও তত্ত্বে পৌঁছনো যায়নি, তবু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। 

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী

শিকারপুরে পাশাপাশি দুটি মন্দির। তার মধ্যে একটি মা কালীর মন্দির। মন্দিরের পাশে যে মন্দিরটি রয়েছে, তাতে একটি পুরুষ ও নারী মূর্তি রয়েছে। পাশাপাশি বাঘ, শিয়াল ও আরও কিছু বিগ্রহ তৈরি করা আছে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এটি শিব-পার্বতীর মন্দির। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, বিগ্রহটি ভবানী পাঠক এবং দেবী চৌধুরানীর। মূলত দেবী চৌধুরানীর মন্দিরের খ্যাতিতেই দেশ বিদেশের পর্যটকরা এখানে আসেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসম ও বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে এটি বাড়তি আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

মন্দিরকে ঘিরে ছড়িয়ে নানা উপকথা

জলপাইগুড়ির শিকারপুর চা বাগান ঘেরা ছোট্ট গ্রামে এই মন্দিরকে ঘিরে ছড়িয়ে আছে নানা উপকথা। গেট দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে পাশাপাশি দু’টি মন্দির। তার মধ্যে একটি  মা কালীর। এখানে প্রতি বছর নিয়ম করে দু’বার কালীপুজো হয়। একবার আষাঢ় মাসে, আর একবার কার্তিক মাসে। খুব বড় না হলেও নিয়মনিষ্ঠায় ঘাটতি থাকে না। ইদানীং দু একজন অত্যুৎসাহী কালীপুজোয় রাতে গাড়ি নিয়ে খানিকটা ইতিহাস খানিকটা অ্যাডভেঞ্চারের টানে হাজির হন। 

Advertisement

দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকের মূর্তি

কালীমন্দিরের পাশের যে মন্দিরটি রয়েছে, তাতে একটি পুরুষ ও একটি নারী মুর্তি রয়েছে। পাশাপাশি বাঘ, শিয়াল ও আরও কিছু বিগ্রহ আছে। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এটি শিব-পার্বতীর মন্দির। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, বিগ্রহ দু’টি ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর। তার একটা কারণ আনন্দমঠের লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজে এই এলাকায় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছিলেন। তখন এলাকা রংপুর এস্টেটের অন্তর্গত ছিল বলে কারও কারও দাবি। এই দাবির সমর্থনে কিছু ঐতিহাসিকের গবেষণা ও দলিলও রয়েছে।

বঙ্কিমের দেবী চৌধুরানী কে ?

বৈকুন্ঠপুর রাজবংশের এক বংশধর দর্পদেব রায়কত ১৭২৮ থেকে ১৭৯৩ সাল অবধি রাজত্ব করার সময় ভবানী পাঠক নামে এক সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে আসেন। রাজা দর্পদেবের উদ্যোগেই এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। রেমন্ড হিলাইচ নামে এক ইংরেজ স্থপতি মন্দিরটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। পরে ১৮৭১ সালে রাজা যোগেন্দ্রদেব রায়কতের আমলে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। এই মন্দিরই এই এলাকার মূল কিংবদন্তি। তার টানেই লোকে আসেন।

ডাকাত-সন্ন্যাসী ও তাঁর শিষ্যা

কিংবদন্তী রয়েছে, ভবানী পাঠক নিজে ডাকাত সর্দার ছিলেন। অনেকটা রবিনহুডের মতো। ডাকাতি করলেও নিজে সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করতেন। অত্যাচারী ইংরেজ ও দেশীয় জমিদারদের ওপর লুঠতরাজ চালিয়ে তা দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তাঁর সহযোগী ও শিষ্যা ছিলেন দেবী চৌধুরানী।

দেবী কি কাল্পনিক !

আবার অন্য মতে দুই ঐতিহাসিক চরিত্র বাংলাদেশের রংপুরের মন্থনী রাজ এস্টেটের সর্বময় কর্ত্রী জয়দুর্গা দেবী চৌধুরানী নামে এক তেজস্বিনী মহিলা ছিলেন। তাঁকেই কল্পনায় দেবী চৌধুরানী হিসাবে রূপ দিয়েছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তবে ইতিহাস যাই হোক স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বিশ্বাসই সব।

আপাতত শিকারপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষই এর দেখাশোনা করেন। কিছুদিন আগে মন্দিরটি পুড়ে গিয়েছিল। তারপর রাজ্য পর্যটন দফতরের তরফে সংস্কারের কাজ করা হয়। পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এটাকে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বেশি ঝাঁ চকচকে করতে গেলে গা ছমছমে একটা আলো-আঁধারি সঙ্গে প্রাচীণতার ইতিহাস যেন ক্ষুণ্ণ না হয়, সেদিকে নজর দিতে অনুুরোধ করা হয়েছে।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement