Advertisement

শহরে কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধিই ডেকে আনছে অলস চিতাবাঘ, দাবি গবেষকদের

শিলিগুড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই কুকুরের নির্বীজকরণ বন্ধ রয়েছে। ফলে বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা। সহজলভ্য সেই কুকুরের ক্রম বর্ধমান সংখ্যাই বনের চিতাবাঘকে টেনে আনছে শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে। খানিকটা অলস চিতাবাঘ সহজ এবং অনায়াস শিকারের লোভেই মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়ছে শহরের আনাচে কানাচে।

শিলিগুড়িতে ফ্যাটের সিঁড়িতে বসে চিতাবাঘ
সংগ্রাম সিংহরায় / জয়দীপ বাগ
  • শিলিগুড়ি,
  • 18 May 2021,
  • अपडेटेड 10:26 AM IST
  • কুকুরের সংখ্যাবৃদ্ধিই চিতাহবাঘের আকর্ষণের কারণ
  • চিতাবাঘ শুমারি করার উপর জোর
  • শিলিগুড়ি এলাকায় বনাঞ্চল কমেছে

নির্বীজকরণ বন্ধ, বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা

শিলিগুড়িতে দীর্ঘদিন ধরেই কুকুরের নির্বীজকরণ বন্ধ রয়েছে। ফলে বাড়ছে কুকুরের সংখ্যা। সহজলভ্য সেই কুকুরের ক্রম বর্ধমান সংখ্যাই বনের চিতাবাঘকে টেনে আনছে শহরের কংক্রিটের জঙ্গলে। খানিকটা অলস চিতাবাঘ, সহজ এবং অনায়াস শিকারের লোভেই মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়ছে শহরের আনাচে কানাচে। বিপদ বাড়ছে মানুষের, বিপদ বাড়ছে বনের পশুরও।

জঙ্গলে শিকার নেই, ফলে বিকল্প রাস্তায় খাবার যোগাড়ে মন

জঙ্গল কেটে সাফ। তাই বন্যপ্রাণের অভাব। তাই জঙ্গলে শিকারেরও অভাব ঘটেছে সম্প্রতি। ফলে অগত্যা লোকালয় ছাড়া শিকার কোথায়। এটা বুঝতে একটা চিতাবাঘের যতদিন লাগে। ততদিন সে এ পথ মাড়ায় না। একবার শহর ও শহরতলিতে সহজ শিকারের স্বাদ পেয়ে গেলে বারবার ঘুরে ঘুরে আসে বনবাসী। 

শহর বেড়েছে, বন কমেছে

শিলিগুড়ি শহরের প্রান্তসীমা এই কদিন আগেও ছিল দুই মাইল এলাকা। আকাশবাণী ভবনের পর থেকে নির্জন শিলিগুড়ি দেখতে দেখতে জনারন্য হয়ে উঠেছে। এখন শালুগাড়া পার করে বেঙ্গল সাফারি পার্ক পর্যন্ত বন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে জনপদ। ফলে চিতাবাঘের স্বাভাবিক বাসস্থান পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। ফলে কখনও পুরনো এলাকায় ঘুরে আসছে বন্যরা। চিতাবাঘ যেহেতু একটু লোকালয় ঘেঁষা বরাবরই, তাই তাদের শহরে ঢুকে শিকার করার প্রবণতা রয়েছে।

পরিবেশ ও বন্য়প্রাণ গবেষকদের উদ্বেগ

পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়িয়েছে বন দপ্তরের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পরিবেশ ও প্রাণিবিদদের। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসাতেই আরও বেশি চিন্তার ভাঁজ পরেছে তাদের মাথায়। এই মুহূর্তে কত চিতা রয়েছে, তার হিসেব নেই কারও কাছে। কারণ চিতাবাঘের কোনও শুমারি হয় না। ফলে চিতাবাঘের সংখ্যা বেড়েছে কি না, বাড়লেও কত তা কিছুই জানা নেই। পাশাপাশি শুমারি হলে অনেক চারিত্রিক বিষয় জানতে সুবিধা হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

বন দফতরের দাবি

বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চিতাবাঘ বনের পাশাপাশি নিজের বাসস্থানের অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত বিচরণ করে। শিলিগুড়ি শহররে ২৫ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে একাধিক বনাঞ্চল রয়েছে। একদিকে বিস্তীর্ণ বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল, মহানন্দা অভয়ারন্য়, সেই সঙ্গে নকশালবাড়ি এলাকায় কার্শিয়াং রেঞ্জ, ঘোষিত জঙ্গলের অভাব নেই। ফলে মাঝে মধ্যেই ঢুকে পড়ছে চিতাবাঘ।

লকডাউনে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে

লক ডাউন পরিস্থিতিতে রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত, গাড়ি চলাচল কম থাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করা অনেকটাই সুবিধা করে দিয়েছে চিতাবাঘের। জঙ্গলে মুরগি, হরিন, বাইসন, গরুর মতো প্রাণির অভাব থাকায় চিতাবাঘগুলি জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ের গবাদি পশু এবং কুকুরগুলিকে টার্গেট করছে। আর সেগুলোর টানেই এখন চিতাবাঘের সঙ্গে মানুষের সংঘাত বাড়ছে।

কে কি বলছেন?

এ বিষয়ে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর কো অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, "চিতাবাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হচ্ছে। খাদ্যের অভাবেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। সে জন্য বন দপ্তরের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব চিতাবাঘের শুমারি করা।" সোসাইটি ফর অ্যানিম্যাল অ্যান্ড নেচার প্রোটেকশন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, "চিতাবাঘের মাংসের মেনুতে নতুন সংযোজন হয়েছে কুকুরের মাংস। আর তার টানেই লোকালয়ে ঢুকে পরছে তারা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বন দপ্তরের উদ্যোগে দ্রুত চিতাবাঘের সুমারি হওয়া উচিৎ। হাতি, বাঘ, গন্ডার, বিলুপ্ত প্রায় পাখির শুমারি হলে চিতাবাঘও একইভাবে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণির তালিকায় রয়েছে। আর শুমারি হলে চিতাবাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবির্তনের বিষয়টিও পরিস্কার হবে।" অপ্টোপিকের সম্পাদক দীপজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, লকডাউনে খাবারের অভাবে লোকালয়ে ঢুকছে চিতাবাঘ। কুকুর শিকারই মূল লক্ষ্য এদের। তিনিও চিতাবাঘের শুমারির উপর জোর দিয়েছেন।

শিলিগুড়িতে গত কয়েক বছরে একাধিকবার চিতাবাঘ ঢোকার ঘটনা ঘটেছে

গত কয়েক বছরে চিতাবাঘ ঢোকার মতো ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। ২০১১তে প্রথমবার শিলিগুড়ি শহরের লিম্বুবস্তিতে চিতাবাঘ ঢুকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খাঁচাবন্দি করতে গিয়ে বন দফতরের কর্মীরা জখমও হন। এরপর শহরের হাকিমপাড়ায় সকাল বেলায় চিতাবাঘ ঢুকে গোটা ঘর তছনছ করে ফেলে। এরপর বন দফতরের কর্মীরা ওই চিতাকে খাঁচাবন্দি করতে গিয়েও কম বেগ পেতে হয়নি। এরপর শালুগাড়াতে চিতাবাঘ ঢুকে পড়ে আবার। ২০১৯ এ সেবক রোডে চিতাবাঘের ধারাবাহিক আনাগোনার কাহিনী তো শিলিগুড়িতে মিথ হয়ে গিয়েছে। সেই চিতাবাঘটি কুকুর ধরে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। বন দফতরের তরফ থেকে খাঁচা পেতে ছাগলের টোপ দিয়েও ফাঁদে ফেলা যায়নি। শেষমেষ তাকে ধরতেও কুকুরের টোপ দেওয়া হয়। যা গিলতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন চিতা বাঘবাবাজি। এরপরেও কখনও মাটিগাড়া, কখনও ফাঁসিদেওয়া, কখনও নকশালবাড়িতে চিতা হামলা করে।  চলতি বছরেও শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনা, শালুগাড়া, সেভক রোড, ইস্টার্ণ বাইপাস, সমরনগর, চম্পাসারির মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চিতাবাঘের প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি পবিত্রনগরে চিতাবাঘের আক্রমণে জখমও হয়েছে তিন বাসিন্দা। সােমবার চিতাবাঘ ঢুকেছিল যে বাড়িতে ওই ফ্ল্যাটেও কুকুর ছিল বলে জানা গিয়েছে।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement