চিতাবাঘ, হাতি ও ভালুকের আতঙ্কে সন্ধ্যার নামার আগেই মাদারিহাটের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা ঘরবন্দি হয়ে যাচ্ছেন। বন্যপ্রাণীর অজানা হামলার আশঙ্কায় মাদারিহাটের ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা কার্যত বিকালের মধ্যেই ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। চিতাবাঘ ও ভালুকের আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার লোকালয়ে শুরু হয়েছে হাতি দলের তাণ্ডব।
সন্ধ্যার আগেই খিল দরজায়
শনিবার মধ্যরাতে বীরপাড়ার পাশে ফালাকাটা ব্লকের দলগাঁও চা বাগানে হাতির দল পাঁচটি ও ভারত-ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্তে জয়গাঁর খোকলাবস্তিতে দু’টি ঘর সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাতির দল। গত বুধবার গ্যারগেন্দা চা বাগানে একটি চিতাবাঘ ও মাকরাপাড়া চা বাগানে একটি ভালুকের বুকচেরা মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বক্সার জঙ্গলে সম্প্রতি ট্র্যাপ ক্যামেরায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারে ছবিও ধরা পড়েছে। পর পর বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত এই সব ঘটনায় জঙ্গল লাগোয়া বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাই কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে অন্ধ্যার আগেই মাদারিহাট ও কালচিনির জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বিকালের মধ্যেই ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। সন্ধ্যার আগেই ঘরের দরজার খিল তুলে দিচ্ছেন।
অভয় দিচ্ছেন বনকর্তারা
যদিও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সহায়ক দেবদর্শন রায় বলেন, বন্যপ্রাণীর দেহ উদ্ধার হতেই পারে। তার জন্য বাসিন্দাদের অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া, পরপর এই সব ঘটনার পর বন্যপ্রাণীর হামলা থেকে সজাগ থাকতে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে সচেতনতা অভিযান চালানো হচ্ছে। বন্যপ্রাণী ও জঙ্গল সুরক্ষায় আমরা সব সময় সতর্ক আছি।
হাতি, ভালুক, রয়্য়াল বেঙ্গল. চিতাবাঘ
পর পর বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার ও বক্সার জঙ্গলে বাঘের ছবি ধরা পড়ার পর এবার কালচিনি ও মাদারিহাট ব্লকের চা বাগান ও লোকালয়গুলিতে নতুন করে হাতির উপদ্রব শুরু হয়েছে। শনিবার মধ্য রাতে বীরপাড়ার পাশে ফালাকাটার দলগাঁও চা বাগানের শাল লাইনে কয়েকটি হাতি ঢুকে পাঁচটি শ্রমিক আবাস সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঘরবাস গুঁড়িয়ে দিয়ে হাতির দল ঘরে থাকা মজুত আটা, চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী খেয়ে সাবার করে দেয়।
হাতির তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি
শ্রমিক আবাস গুঁড়িয়ে দিয়ে হাতির দল রাতেই পাশেই জলপাইগুড়ি বনদপ্তরের দলগাঁওয়ের জঙ্গলে ঢুকে যায়। হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই চা বাগানের মঞ্জু মিঞ্জ, ফাগনী তিরকি, সানচারোয়া ধানোয়ার ও কালিদাস খাঁখাঁ। হাতির দল ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ায় সর্বস্বান্ত শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। দলগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের আনন্দ খাঁড়িয়া বলেন, দলগাঁও চা বাগানে প্রায় প্রতি রাতেই হাতির দল হামলা চালাচ্ছে। এমনিতেই পর পর বন্যপ্রাণী মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে আছেন। তার উপর হাতির উপদ্রব শুরু হওয়ায় শ্রমিকদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।
শ্রমিকদের ঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে হস্তিকূল
দলগাঁও রেঞ্জের ডেপুটি রেঞ্জার প্রকাশ থাপা বলেন, যদি ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলি শ্রমিকদের নিজেদের হয় তাহলে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে শ্রমিকরা সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ পাবে। আর শ্রমিক আবাসগুলি বাগান কর্তৃপক্ষের হয় তাহলে শ্রমিকদের সরকারি ক্ষতিপূরণ মিলবে না। এদিকে, শনিবার একই রাতে জয়গাঁ শহরের খোকলাবস্তিতে হাতির দল দু’টি ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।