করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে বসে গিয়েছে উত্তরের পর্যটন। তরাই, ডুয়ার্স সহ গোটা উত্তরবঙ্গে এখন পর্যটনে হাহাকার। ফলে পর্যটনের অন্যান্য শাখার মতো যাঁরা শুধুমাত্র টুরিস্ট ট্যাক্সি চালিয়ে উপার্জন করতেন, তাঁদের মাথায় নেমে এসেছে অনাহারের খাড়া।
তবু অবিচল মানসিক কাঠিন্যে
এই অবস্থাতেও মানসিক জোর না হারিয়ে, নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তরাই ডুয়ার্সের লাক্সারি ট্যাক্সি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। করোনায় তাদের ফোন করলে বিনামূল্যে করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি কিংবা উপযুক্ত জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
সোস্যাল সাইটে পোস্ট করা হয়েছে নম্বর
সংগঠনের যত ট্যাক্সি রয়েছে, তাদের চালকদের ফোন নম্বর প্রকাশ করে সোশ্যাল সাইট এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে যেখানে পারছেন, দৌড়ে যাচ্ছেন। এমন ভাবে ট্যাক্সিচালক গোষ্ঠী এগিয়ে এসেছে, তাঁদের প্রশংসায় ভাসছে উত্তরবঙ্গ। এমনকী সোস্যাল সাইটের মাধ্যমে রাজ্য, দেশ এমনকী বিদেশ থেকেও উড়ে আসছে প্রশংসা।
কি বলছেন ট্যাক্সি ড্রাইভাররা
লাক্সারি ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি কার্তিক ঘোষ জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের আত্মীয়-স্বজনও এমন ঘটনায় ভুক্তভোগী। অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গেলেও তার যা মূল্য ধরা হচ্ছে, তাতে সর্বস্বান্ত হওয়ার জোগাড় সাধারণ মানুষের। তাই বিনামূল্যে আমরাই রোগীদের পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংগঠনের এক সদস্যের দাবি, আমরা বাঁচি আর না বাঁচি, কেউ তো বাঁচুক।
সমস্যা যেখানে আছে, সমাধানও আছে
নিজেদেরই অন্নসংস্থান নেই। তার মাঝে এভাবে এগিয়ে আসা সম্ভব! সংগঠনের তরফে জানানো হলো, মানুষ থাকলেই পর্যটন থাকবে। পর্যটন থাকলেই আমাদের ভাত জুটবে। আপাতত যে অতিমারির পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সকলে মিলেই তবে সমস্ত এলাকা রাজ্য কিংবা দেশ রোগমুক্ত হবে। তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, দাবি তাঁদের।
কোথায় কোথায় মিলছে বিনামূল্যে সার্ভিস
শিলিগুড়ি এলাকাতেই আপাতত এই বিনামূল্য ট্যাক্সি সার্ভিস মিলছে। চম্পাসারি, প্রধান নগর, মাটিগাড়া, মেডিকেল কলেজ, এনজেপি, ফুলবাড়ি, সুভাষপল্লি, হাকিম পাড়া, কলেজ পাড়া, শক্তিগড়, মিলন মোড়, সব মিলিয়ে ১৭ জন সদস্যের নাম দেওয়া হয়েছে। এক জন ব্যস্ত থাকলে আরেক জনকে ফোন করলেই তিনি পৌঁছে যাবেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
মানবিকতার জয়গান
যে খানে নার্সিংহোমে জায়গা নেই, বেড বেশি টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অ্যাম্বুল্যান্সে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, এমনকী লালা পরীক্ষাতেও সর্বস্বান্ত হওয়ার মতো অভিযোগে জেরবার স্বাস্থ্য দফতর, সেখানে এমন মহানুভবতা, মানবতার জয়গান মানুষকে লড়াইয়ের রসদ যোগাচ্ছে।