রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার অভিযোগ তুলে আসছে গেরুয়া বাহিনী। ভোটের পর থেকেই তাঁদের বহু কর্মী শাসক দলের চোখ রাঙানিতে ঘর ছাড়া হয়েছেন বলে দাবি বিজেপি শিবিরের। এদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে দেখা গেল এক অন্য চিত্র। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূল নেতাদের ভয়ে টিএমসির-ই একদল কর্মী বাড়ি ছাড়া হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন গ্রাম থেকে দূরে নদীর পাড়ে ৷ শিশু সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে তাঁবু খাটিয়ে মে মাস থেকে রয়েছেন তাঁরা ৷ দলের প্রাক্তন ও বর্তমান অঞ্চল সভাপতির গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই এই সমস্যা তৈরী হয়েছে বলে দাবি বাড়ি ছাড়া তৃণমূল কর্মীদের ৷
পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়নগড় বিধানসভা অন্তর্গত ধানঘোরী এলাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা। জানা যাচ্ছে, গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু পরিবার নিজেদের গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে আত্মরক্ষার্থে ৷ গ্রাম ছেড়ে অনেকটা দূরে কেলেঘাই নদীর পাড়ে তাবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা ৷ বাড়ির ছোট বাচ্চা , শিশু, বৃদ্ধ সকলকে নিয়েই ত্রিপলে ঘেরা অস্থায়ী বাসস্থানে দিন কাটছে তাদের ৷ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সকলেই ৷
নদীর পাড়ে অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় নেওয়া পুলিন দোলই বলেন, "আমরা প্রথমে সিপিআইএম দলের সদস্য ছিলাম ৷ পরে আমাদের জরিমানা করে তৃণমূল দলে নেওয়া হয়েছিল ৷ এরপরে স্থানীয় দুই টিএমসি নেতার মধ্যে সমস্যা তৈরী হয় ৷ একটি বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে দুই নেতা লক্ষ্মী শীঠ ও নাকফুড়ি মুর্মু-র মধ্যে গণ্ডগোল তৈরী হয় ৷ আমরা সকলেই টিএমসি- র সদস্য ৷ আমরা যে রাজা তার প্রজা বলেই নিজেদের মনে করি ৷ আমরা সকলেই টিএমসি সমর্থক ৷ কিন্তু তাহলেও আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করতে যায় তৃণমূলের একদল লোক ৷ তাদের আক্রমনের কারণে নিজেদের রক্ষা করতে বাড়ি ছেড়ে বাইরে আশ্রয় নিয়েছি ৷ ওদের চাপেই বাইরে আশ্রয় নিতে হয়েছে ৷ আমরা সকলেই তৃণমূল ৷ দুই নেতার গোষ্ঠী কোন্দলে আমাদের সমস্যা হচ্ছে ৷ তবে আমরা তৃণমূলের সদস্য। টিএমসি-তেই থাকতে চাই ৷ সেই সাথে শান্তিতে বাড়িতে ফিরতে চাই আমরা।"
এই ঘটনায় তৃণমূলের বর্তমান অঞ্চল সভাপতি লক্ষী শীঠ-এর বিরুদ্ধেই আক্রমনের অভিযোগ করছেন বাড়িছাড়া তৃণমূলের কর্মীরা ৷ তাঁদের দাবি- তাঁরা প্রক্তন অঞ্চল সভাপতি নাকফুড়ি মুর্মুর অনুগামী ৷ তাই বর্তমান অঞ্চল সভাপতি এই আক্রমন শুরু করেছেন ৷ তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের বর্তমান অঞ্চল সভাপতি লক্ষী শীঠ ৷ তিনি বলেন, "ওঁদের এলাকা ছাড়াতে তৃণমূলের লোক বলেনি ৷ ওঁরা নিজেরাই পুলিশের ভয়ে এলাকা ছাড়ে দুরে আশ্রয় নিয়েছেন ৷ কারন নির্বাচনের আগে ওই লোকেরা বিজেপির হয়ে কাজ করছিলেন ৷ তাঁরা এলাকাতে তৃণমূলের কর্মীদের ওপরে আক্রমন-সহ একাধিক ঘটনায় জড়িত ৷ তাই সেই বিষয়ে মামলা হয়েছে ওদের নামে ৷ পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে এমন আশঙ্কা করেই এলাকা ছেড়ে দূরে আশ্রয় নিয়েছে ৷ আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা।" যদিও পুরো বিষয়টি সামনে আসতেই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি স্থানীয় বিধায়ক-সহ নেতৃত্বদের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷