বর্ষা এলেই প্লাবিত একের পর এক গ্রাম। মানুষজনের বাস তখন উঁচু কোনও বাড়ি ছাদে কিংবা ত্রাণ শিবিরে। রাস্তা ঘাটে গাড়ির বদলে চলছে নৌকা। ভাসছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অতি বৃষ্টিতে প্লাবন এলেই এই ছবি দেখা যায় ঘাটালে। এবার তার অন্যথা হয়নি। প্রবল বন্যায় ঘাটালে বানভাসি ঘাটালের বিরাট এলাকা। সম্প্রতি এলাকা পরির্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ দেব। দুজনেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের প্রসঙ্গে টেনে এনে নিশানা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। অন্যদিকে রাজ্যের সদিচ্ছ্বা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি।
জটে আটকে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান
ভাবতে অবাক লাগলেও এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। শিলান্যাস হয় ১৯৮২ সালে। কিন্তু সেটা ২০২১ সালেও এসে আর বাস্তবায়ন হয়নি। মাঝে অনেক ডিপিআর জমা, ফাইল লেনদেন চলে। এই প্রকল্পের টাকা প্রথমে ঠিক হয় কেন্দ্রীয় সরকার ৭৫ শতাংশ দেবে এবং রাজ্য দেবে বাকি ২৫ শতাংশ। পরে সেটি বদলে ঠিক হয় কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই ৫০ শতাংশ করে টাকা দেবে। কিন্তু ঘাটালের মানুষ এখনও এই প্রকল্পের কাজই দেখতে পাননি। কিন্তু নির্বাচন আসলেই এখানে অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান।
কী এই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান
ঘাটাল মহকুমাজুড়ে সমস্ত নদীবাঁধ মেরামত করা।
পাম্প হাউস তৈরির অনুমোদন চন্দ্রকোনা-ঘাটাল-দাসপুর-সহ পাশ্ববর্তী এলাকায়।
নদীপথ সংস্কার করা হবে কংশাবতী ও শিলাবতীতে।
স্থানীয় খালগুলিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, খাল সংস্কার।
সেই সঙ্গে ঘাটালের নদী ও খাল গুলিতে লক গেট বাসানো।
কী দাবি তৃণমূলের
ঘাটালের প্লাবিত এলাকা মঙ্গলবার পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে তিনি ফেসবুক পেজে লেখেন, "ঘাটালের ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য প্রতি বছর জল যন্ত্রণার মধ্যে পড়তে হয় এই অঞ্চলের মানুষদের। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন জরুরি। সংসদে বারবার সরব হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র সরকার ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করতে কোনওরকম উদ্যোগ নেয়নি। রাজ্য সরকার দুর্গতদের জন্য প্রশাসনিক সহায়তা সুনিশ্চিত করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমি সবাইকে অনুরোধ করব একে অপরের পাশে দাঁড়াতে।"
পাল্টা নিশানা বিজেপির
মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টচার্য জানান, "ঘাটালের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত না হলেও চন্দ্রেশ্বর খাল গোপীগঞ্জ থেকে বৈকন্ঠপুর পর্যন্ত এসেছে। মাত্র ৪ কিমি বাড়িয়ে শীলাবতিতে মিশিয়ে দেওয়া হলে ঘাটাল-সহ পাশ্ববর্তী এলাকা এই জলমগ্ন অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ রাজ্য সরকার নেয়নি। রাজ্য সরকার যদি বিজেপির সাহায্য চাইলে তাহলে অবশ্যই পাবে। আমাদের সাংসদরা তৈরি রয়েছেন কেন্দ্রের ফান্ড থেকে টাকা এনে রাজ্যকে সাহায্য করার জন্য। এই অবস্থান আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি।"
জল নামার অপেক্ষায় দুর্গতরা
দু পক্ষেই দঁড়ি টানাটানি আদৌ কবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মুখ দেখবে তা ঠিক নেই। বছরের পর বছর চলে যায়, ইস্যুটি বারবার ওঠে। কিন্তু আবার ঠান্ডাঘরে চলে যায়। বন্যার জল সবকিছু খুইয়েছেন এমন প্রচুর মানুষ আছেন। সবকিছু ছেড়ে তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। প্রতি বছর যেন এগুলো চেনা ছবিই হয়ে উঠছে তাঁদের কাছে। আপাতত তাঁরা চেয়ে রয়েছেন জল নামার অপেক্ষায়।