
Fake Darjeeling Orange Alert: পাহাড় চড়তে গেলে রাস্তার ধারে সারি সারি দোকান, আর সামনে ঝুড়িভরা কমলালেবু। শীতের সময়ে এই দৃশ্য একেবারেই পরিচিত। অনন্য স্বাদ আর সুগন্ধের জন্য দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর সুনাম বহুদিনের। আর সেই জনপ্রিয়তাকেই হাতিয়ার করে পাহাড়ি পথে এখন দেদার বিক্রি হচ্ছে ভিনরাজ্যের লেবু।
শিলিগুড়ি থেকে সেবক রেলগেট হয়ে তিস্তাভ্যালি পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য দোকান। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিক্রেতারা প্লাস্টিকের ব্যাগে কমলালেবু ভরে ‘লোকাল অরেঞ্জ’ বলে বিক্রি করেন ২০০-৩০০ টাকা দরে। অথচ শিলিগুড়ির বাজারে নাগপুর লেবুর দাম কেজি প্রতি মাত্র ৭০-৮০ টাকা। সেই ফলই পাহাড়ে এনে ‘দার্জিলিং লেবু’ পরিচয়ে কয়েকগুণ দামে বিকোচ্ছে।
পাহাড়ে পথে ঘুরতে ঘুরতে স্থানীয় কমলালেবুর পসরা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সবাই চান স্থানীয় ফল চেখে দেখতে। কিন্তু দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ঙের পথের ধারে পসরা সাজিয়ে বসা কমলালেবুর বেশিরভাগই দার্জিলিঙের কমলা নয়। এমনটাই সামনে এসেছে সম্প্রতি।
দেখে-শুনে বুঝতে পারবেন না। কেই বা বিশেষজ্ঞ রয়েছে। যাঁরা বুঝতে পারবেন। পর্যটকেরা যে প্রতারিত হচ্ছেন, তার প্রমাণ মিলছে বারবার। পর্যটকরা গাড়ি থামিয়ে রাস্তার ধারের দোকান থেকে ‘দার্জিলিং কমলালেবু’ কিনে ঠকছেন। খোসা ছাড়াতেই স্বাদহীন, শুকনো টক ভাবে মন খারাপ।" দার্জিলিঙের কমলা এত বিস্বাদ? ছোট থেকে শুনে এসেছি, দুর্দান্ত টম-মিষ্টি স্বাদ। কিন্তু এতো একেবারেই বাজে খেতে।" এদিকে চিৎকার করে দার্জিলিঙের কমলা বলেই চালাচ্ছেন তাঁরা। প্রশ্ন করলে দোকানি স্বীকার করলেন, দার্জিলিং-সিটং-তিস্তাভ্যালির আদি কমলালেবুর সঙ্গে নাগপুর-নাসিকের ফল মিশিয়েই বিক্রি করছেন। কারণ, “সবাই তো এভাবেই বিক্রি করছে!” আর দার্জিলিঙের কমলা সুস্বাদু হলেও ফলন কম। তাই দাম বেশি।
মংপু সিঙ্কোনা প্রকল্পের তরফেও পাহাড়ের কমলালেবুর গুণগত মান যাচাই করা হয়। এখানকার অধিকর্তা ডঃ স্যামুয়েল রাই সংবাদমাধ্যমকে জানান, “এটা ঠিক নয়। এতে দার্জিলিংয়ের আসল কমলালেবুর বদনাম হয়। প্রশাসনকে অবিলম্বে ফাটকা কারবার বন্ধ করতে হবে।”
কীভাবে বুঝবেন কোনটা আসল দার্জিলিং কমলালেবু?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আকার তুলনামূলকভাবে ছোট, দুই প্রান্ত চ্যাপ্টা, রং উজ্জ্বল পারফেক্ট কমলা, পাতলা ও মসৃণ খোসা, খোসা ভেতরের অংশের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে না। অন্যদিকে নাগপুর-নাসিকের কমলালেবু। আকারে বড় ও গোলাকার, রংয়ে হলুদ-সবুজের আভা। মোটা ও খসখসে খোসা এর বৈশিষ্ট্য। দার্জিলিং পাহাড়ে দুই ধরনের লেবু পাওয়া যায়, ট্যানজারিন (ছোট, মিষ্টি, পাতলা খোসা) ও মান্দারিন (আকারে একটু বড়, খোসা তুলনামূলক মোটা, লালচে)। বাহ্যিক মিল থাকলেও এগুলোর স্বাদ ও সুবাস স্পষ্টভাবে আলাদা।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শক্তিপ্রসাদ শর্মাও স্বীকার করেছেন, কথায়, “বেশিরভাগ মানুষই জানেন না কোনটা আসল দার্জিলিং কমলালেবু। সেই অজ্ঞতার সুযোগই নেন বিক্রেতারা। ফলে পর্যটকেরা টাকা দিয়ে ঠকছেন।” পর্যটনের দাপটে দার্জিলিংয়ের অরেঞ্জের নাম যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই বেড়েছে নকলের কারবারও। ফলে লাভবান হচ্ছে দালাল চক্র, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাহাড়ের প্রকৃত কৃষক ও ক্রেতারা।