Robinson Street At Jalpaiguri: ২০১৫ সালে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে ছয় মাস দিদি দেবযানীর কঙ্কালের সঙ্গে ঘর করেছিলেন। এই ঘটনায় রাজ্যবাসীর অধিকাংশের মানসিক স্থিতি নড়ে গিয়েছিল। এমনও হয়! এরপর একই রকম একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায়। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে একই পরিবারে একবার এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রবিবার জলপাইগুড়িতে যে ঘটনা সামনে এসেছে তা ব্যাতিক্রমী শুধু নয়, অবাক করার মতোও বটে। এক বছর আগে পার্থর মতোই স্থানীয় অনিন্দিতা বাবার মৃতদেহ নিয়ে বসেছিলেন। তখন হইচই হয়েছিল। তবু অনেকে মেনে নিয়েছিলেন। এবার এক বছরের মাথায় একইভাবে মৃত মায়ের দেহ নিয়ে বসে থাকলেন তিনি। যার পিছনে অন্য় কোনও গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ।
কয়েকদিন থেকেই মা-মেয়ের কারও বাইরে দেখা পাচ্ছিলেন না আত্নীয়রা। এমনিতেই ওই পরিবারের লোকেরা খুব একটা কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন না। তবে গত বছর বাড়িতে অমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায়, সকলেই একটি বাড়তি নজর রাখতেন গতিবিধির দিকে। তবু শেষরক্ষা হল না। আসলে বাড়ির ভিতরে কী চলছে তা বাইরে থেকে প্রতি মুহূর্তে বোঝা সম্ভব নয়।
অনিন্দিতাদের বাড়ির পাশেই থাকেন তাঁদেরই আত্মীয় অমিত কর্মকার। রবিবার সকালে তিনিই প্রথম পচা গন্ধ পান। সন্দেহ হতেই জানান বাকি প্রতিবেশীদের। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা খুলতে চাইছিলেন না অনিন্দিতা। পরে পুলিশ এসে দরজা খুলতে কার্যত বাধ্য করে। ঘরে ঢুকে দেখা যায়, বাথরুমে পড়ে রয়েছে অঞ্জলিদেবীর দেহ। অনিন্দিতার দাবি, সপ্তাহখানেক আগে তাঁর মা বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। পুলিশ যখন ঘরের ভেতরে দেহ উদ্ধার করছে, তখন বাড়ির বাইরে ভাবলেশহীনভাবে বসে অনিন্দিতা। কাউকে জানালেন না কেন জিজ্ঞাসা করায় খেপে যান তিনি। পাল্টা প্রশ্ন, "কেন জানাব?"
জলপাইগুড়ির কলেজপাড়ার কর্মকারবাড়ির এই ঘটনায় এক বছরে দুবার অবাক হলেন প্রতিবেশীরা। এক বছর আগে ১৯ অগাস্ট ওই বাড়িতেই বাবা অজিত কর্মকার (৭৫)-এর মৃতদেহ আগলে দিনের পর দিন ঘর বন্ধ করেছিলেন মেয়ে অনিন্দিতা কর্মকার। এবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। শুধু বাবার জায়গায় মারও একই পরিণতি হল এটাই ভেবে স্তম্ভিত ও ব্যথিত এলাকাবাসী। বছর সত্তরের অঞ্জলি কর্মকারের দেহ নিয়েই দিব্যি দিন কাটাচ্ছিলেন মেয়ে অনিন্দিতা। পড়শিরা উদ্যোগ না নিলে আরও কতদিন এমন থাকত তা 'দেবা না জানন্তি'। হাড়হিম করা এই ঘটনায় স্তম্ভিত জলপাইগুড়ির বাসিন্দারা।
মৃত অঞ্জলিদেবীর ভাইপো অমিত জানিয়েছেন, মা ও মেয়ের কোনও খবর পাচ্ছিলেন না কয়েকদিন ধরে। খাবার দিতে চাইলে নিত না। এদিন সকালে পচা গন্ধ পেয়ে তিনিই পড়শিদের জানান। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকেও জানান, ‘গত বছর যেভাবে জেঠুর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, এবারও ঠিক একইভাবে জেঠিমার দেহ মিলল বাথরুম থেকে।’ গত বছর স্বামীর মৃত্যুর খবর প্রথম প্রকাশ করেন অঞ্জলিদেবীই। বাবার মৃত্যুর খবর যাতে কেউ জানতে না পারে তার জন্য মাকেও কার্যত ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন অনিন্দিতা। ওষুধ কেনার অজুহাতে বাইরে এসে স্বামীর মৃত্যুর খবর সবাইকে জানিয়েছিলেন অঞ্জলিদেবী।
পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে অনিন্দিতাকে তাঁর আত্মীয়দের তত্ত্বাবধানে রেখে আসা হয়েছে। আত্মীয়দের মাধ্যমেই তার চিকিৎসা করানো দরকার বলে পুলিশ জানিয়েছে। অনিন্দিতারো শরীরের অবস্থা ভাল না। চেহারা খারাপ হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলার তারকনাথ দাসও স্তম্ভিত। তিনি জানান, বাবার মৃত্যুর পর মা ও মেয়েকে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অধীনে চিকিৎসা করানো হয়েছিল। ফের এমন ঘটনা অনভিপ্রেত বলে জানিয়েছেন তিনি।