উত্তরবঙ্গে টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি । একের পর এক ব্রিজ ভেঙে পড়ছে। হাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপ শক্তি হারিয়ে এখনও ঘূর্ণাবর্ত হিসেবে উত্তর-পূর্ব বিহারেই অবস্থান করছে। এরফলে মঙ্গলবারও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি হতে পারে। বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বন্যাকবলিত উত্তরবঙ্গে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৪ জনের। এই পরিস্থিতিতে আজ উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সেইসঙ্গে দেখা করবেন খগেন মুর্মু এবং শঙ্কর ঘোষের সঙ্গেও। সূত্রের খবর, বুধবার ৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
সোমবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ পৌঁছে প্রথমে হাসিমারায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সেখান থেকে যান নাগরাকাটায়। আজ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা ধস বিধ্বস্ত মিরিকের পরিস্থিতি পরিদর্শনে। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা এবং এক জনকে হোমগার্ডে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা। এদিকে উত্তরবঙ্গের বন্যার জন্যে প্রশাসনিক ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন উত্তরবঙ্গ সফর করবেন তিনি। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যান।
এদিকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, সোমবারজলপাইগুড়ির নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। আর সেখানে গিয়েই হামলার মুখে পড়েন তাঁরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট, পাথর ছোড়া হয়, আর তাতে গুরুতর আহত হন খগেন মুর্মু। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে দ্রুত শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। প্রয়োজনে তাঁকে দিল্লির এইমসে স্থানান্তরিত করা হতে পারে বলে খবর হাসপাতাল সূত্রে। ঘটনার পরই রাজনৈতিক চাঞ্চল্য তীব্র হয়। বিজেপি দাবি করেছে, শাসক দলের মদতেই এই হামলা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির সাংসদ এবং বিধায়কদের উপর হামলার খবর পেয়ে এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা কাম্য নয়।’ বার্তা দেন, এই পরিস্থিতিতে কেউ যেন প্ররোচনায় পা না-দেন।
বিজেপির দুই জনপ্রতিনিধির উপর হামলার নিন্দা করে সরব হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেনতিনি। তবে তৃণমূল ও বিজেপিকে এই সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেন তিনি। বিজেপির দুই জনপ্রতিনিধির উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ওই পোস্টের পরই বিজেপি নেতাদের উপর হামলার জন্য রাজ্য ও শাসকদলের নাম জড়ানোর নিন্দা করে পাল্টা পোস্ট করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোনও যাচাই করা প্রমাণ, আইনি তদন্ত বা প্রশাসনিক প্রতিবেদন ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সরাসরি দোষারোপ করেছেন। এটি কেবল নিম্নমানের রাজনীতির উদাহরণ নয়, এটি প্রধানমন্ত্রী যে সাংবিধানিক নীতি বজায় রাখার শপথ নিয়েছেন তার লঙ্ঘন। যে কোনও গণতন্ত্রে আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়। কেবলমাত্র আইনি প্রক্রিয়াই দোষী চিহ্নিত করতে পারে। কোনও রাজনৈতিক টুইট নয়।’ এই আবহে বুধবার অর্থাৎ ৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে পারেন অমিত শাহ। তবে সবটাই জল্পনার স্তরে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে বঙ্গ বিজেপির কেউ কিছু বলতে নারাজ। বঙ্গ বিজেপির নেতারা এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।