John Barla Bjp Madarihat: সাধারণত উপনির্বাচনে বিরোধীরা জেতে না। এমন নজির খুব কমই আছে যে সরকারে থাকা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে উপনির্বাচনে বিরোধীদের জিতিয়েছেন এলাকাবাসী। সেই হিসেবে উত্তরবঙ্গের মাদারিহাট বিধানসভাও নজিরবিহীন কোনও ঘটনা ঘটাল না। বিধানসভা নির্বাচনে জেতা আসন হাতছাড়া করল বিজেপি। উপনির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের নজর ছিল মাদারিহাট কেন্দ্রে। কারণ, ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র এই কেন্দ্রটিই ছিল বিজেপির দখলে। কিন্তু ভোটবাক্স খুলতেই বোঝা গেল আরও একবার এখানে গেরুয়া ঝড় তুলতে ব্যর্থ বিজেপি। বাংলার নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবার মাদারিহাট বিধানসভাটি জিতল তৃণমূল।
বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে মাদারিহাট কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টপ্পো ৩০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। আর বিজেপির পরাজয়ের পরই দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ জন বারলা। মনে করা হচ্ছে, জন বারলা ও তার সহযোগীরা সহযোগিতা না করাতেই ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির।
চা বলয়ে গোটা বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লক ছাড়াও জলপাইগুড়ি জেলার সাকোয়াঝোরা ও বিন্নাগুড়ি – এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত মাদারিহাট বিধানসভার অন্তর্ভূক্ত। এর আওতায় রয়েছে টোটোপাড়াও। ২০১৪ সালের প্রবল ‘মোদি ঝড়ে’ও লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রটি জিতেছিল তৃণমূল। তবে মাদারিহাট বিধানসভায় এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ট্রেন্ড ধরে রেখেই ২০১৬-র বিধানসভাটি জিতে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এর পর ২০১৯-এর লোকসভা, ২০২১-এর বিধানসভা এমনকী, ২০২৪ সালের লোকসভাতেও এখানে পদ্ম ফুটেছে। কিন্তু বিজেপির ভোট আগের বারের চেয়ে কিছুটা কমেছিল, জন বারলা টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহ করায়। আলিপুরদুয়ারের সব জায়গায় জনের কর্তৃত্ব না থাকায় লোকসভায় বেরিয়ে গেলেও, এবার বিধানসভা উপনির্বাচনে পা হড়কেছে বিজেপির।
চব্বিশের লোকসভা ভোটের সময় থেকে বিজেপির মাথাব্যথা বাড়িয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা। তবু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে লোকসভা ভোটে জয় এসেছিল। কিন্তু উপনির্বাচনের আগে থেকেই ‘বেসুরো’ ছিলেন তিনি। বার বার তোপ দেগেছেন দলের বিরুদ্ধেই। বিজেপি প্রার্থীর প্রচারে দেখা যায়নি জন বার্লাকে। এমনকী, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গেও তাঁকে ওঠাবসা করতে দেখা গিয়েছিল। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, বার্লা তলায়-তলায় ঘাসফুল শিবিরকে সাহায্য করেছেন।
শুধু ‘বার্লা ফ্যাক্টর’ নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে প্রার্থী বাছাইও। উপনির্বাচনের লড়াইয়ে মাঠে নামিয়েছিল ভূমিপুত্র রাহুল লোহারকে। বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারের বাবা তারকেশ্বর লোহার সিটু নেতা ছিলেন। তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অত্যাচার করার অভিযোগ ছিল। তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি এলাকাবাসী।
কী বললেন বারলা?
সংবাদমাধ্যমে বারলা জানিয়েছেন, উপনির্বাচনে তাঁকে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। আর সেই কারণেই এই ফল। ২০২৬-এও এর কোনও পরিবর্তন হবে না বলেও মনে করছেন তিনি। এদিন তিনি বলেন, “জেলা সভাপতি আর রাজ্য সভাপতির জন্য এটা হয়েছে। ওরা কারও সঙ্গে কথা বলে না। একা একা সিদ্ধান্ত নেয়। দিল্লিতে বসে, কলকাতায় বসে ভোট করায়। আমাদের পাত্তা দেয় না। সংগঠনকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে এমনটাই হবে।”
তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বারলা বলেন, ‘নিউট্রাল আছি। যারা আমাকে গুরুত্ব দেবে না, তাদের জন্য কেন কাজ করব।’ সিদ্ধান্ত পরে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।