ব্রিটিশ আমলে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাড়বাড়ন্ত ছিল, সেই সময় উত্তরবঙ্গেরও বহু জায়গায় বিভিন্ন দফতর খুলেছিলেন তাঁরা। তাঁরা বহু জায়গায় স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। ইউরোপীয় সাহেবদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। আলিপুরদুয়ার জেলার ডুয়ার্সের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কালীপুজো এটা।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই এলাকায় একের পর এক চা বাগান তৈরি করেছিলেন ইউরোপিয়ন সাহেবরা। এই সময় চা বাগানে কাজ করার সময় ছোটোনাগপুর, রাঁচি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছিল শ্রমিক। পুজোর সময় ছুটিতে অনেকে তাদের নিজের বাড়িতে চলে যেত এবং ফিরে আসত না। আর এর ফলে বাগানে শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিত। চা শ্রমিকদের মন যাতে খারাপ না হয়, চা শ্রমিকরা যাহাতে নিজের বাড়িতে না চলে যায় সেজন্য হ্যামিল্টনগঞ্জে এই কালীপুজো চালু করেন তাঁরা।
পরবর্তীতে এই কালীপুজোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করে ইউরোপিয়ন সাহেবরা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে আয়োজন করা হচ্ছে পুজোর। এ বছর এই পুজোর ১০৭ তম বর্ষ। পুজো কমিটির তরফে জানা গিয়েছে, ১৯১৭ সালে ইউরোপিয়ন সাহেবদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো।
প্রথমে একটি কাঠের তৈরি মন্দিরে মাটির প্রতিমা এনে পুজো হত। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মানুষেরা প্রতি বছর এই পুজো করে আসছেন।পরবর্তীতে আশপাশের চা বলয়ের শ্রমিক ও জনগণের সহায়তায় পাকা মন্দির ও ২০০২ সালে পাথরের মূর্তি স্থাপন করা হয়। কালীপুজোর দিনে আলিপুরদুয়ার জেলা ছাড়াও আশপাশের একাধিক জেলা থেকে দর্শনার্থীরা মন্দিরে পুজো দিতে আসেন।
পুজো কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৯১৭ সাল থেকে একই রীতিতে পুজো হত। সেই রীতি মেনেই আমরা পুজো করে আসছি। তরাই ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার দর্শনার্থীরা কালীপুজোর সময় মন্দিরে আসেন। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস এই মন্দিরে তাদের মনোকামনা পূরণ হয়।
অন্যদিকে, এই কালীপুজোকে কেন্দ্র করে হ্যামিল্টনগঞ্জের একাধিক এলাকা জুড়ে আয়োজন করা হয় মেলারও। এ বছর হ্যামিল্টনগঞ্জ কালীপুজো মেলা ৮৯তম বর্ষ। ইউরোপিয়ন সাহেবরাই এই মেলার আয়োজন করতেন। ১২ দিন ব্যাপী এই মেলা চলবে বলে মেলা কমিটির তরফে জানানো হয়।