Kalipuja 2025: শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে, অথচ ইতিহাসের গন্ধে ভরপুর জলপাইগুড়ি জেলার শিকারপুর চা-বাগানঘেরা ছোট্ট গ্রামটি। এখানেই অবস্থিত কিংবদন্তিতুল্য দেবী চৌধুরানী মন্দির। প্রকৃতি, পুরাণ, ইতিহাস আর সাহিত্য, সব কিছু যেন একসঙ্গে মিশে গিয়েছে এই অচেনা গ্রামীণ প্রান্তরে।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ'-এর বিখ্যাত চরিত্র ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী এখানকারই বাসিন্দা ছিলেন। অনেকেই বলেন, উপন্যাসের প্রেরণা এসেছে এই বাস্তব দেবী চৌধুরানী থেকেই। এমনকি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে একটি পুরনো বজরা সংরক্ষিত রয়েছে, যেটি নিয়ে স্থানীয়দের দাবি, সেটিই ছিল দেবী চৌধুরানীর নৌকা। যদিও ঐতিহাসিকভাবে বিষয়টি এখনও প্রমাণিত নয়, কিন্তু মানুষের বিশ্বাসেই যেন গড়ে উঠেছে এই দেবালয়।
মন্দিরের স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য
গেট পেরোতেই চোখে পড়বে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা দুটি মন্দির। একটি মা কালীর, আরেকটি রহস্যে মোড়া মন্দির, যেখানে নারী-পুরুষ দুটি বিগ্রহ পাশাপাশি অবস্থান করছে। মন্দিরের চারপাশে বাঘ, শিয়ালসহ নানা প্রাণীর মূর্তি স্থাপিত। ঐতিহাসিকদের ধারণা, এটি শিব-পার্বতীর মন্দির হতে পারে। কিন্তু স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বিগ্রহই ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর প্রতীক।
প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন এখানে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে এই মন্দিরের আকর্ষণ অনেকটাই সাহিত্যিক। কারণ, তাঁদের প্রিয় চরিত্র ‘দেবী চৌধুরানী’-র নামের সঙ্গে বাস্তবের এই স্থানটি যেন কল্পনা আর ইতিহাসের সেতুবন্ধন রচনা করে।
ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর টান
ভবানী পাঠক আর দেবী চৌধুরানীর নাম শুনলেই যেন ভেসে ওঠে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের রোমাঞ্চ। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখনিতে যেভাবে এই দুই চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছিল, আজও তা বাঙালির মন থেকে মুছে যায়নি। ফলে, এই মন্দির কেবল ধর্মীয় স্থান নয়, এক অর্থে সাহিত্যিক তীর্থক্ষেত্রও।
কালীমন্দির ও পুজোর জাগরণ
দেবী চৌধুরানীর মন্দিরের পাশেই রয়েছে এক প্রাচীন কালীমন্দির, যা সমান জাগ্রত বলে মানেন স্থানীয়রা। প্রতি বছর দু’বার কালীপুজো হয়। একবার আষাঢ় মাসে, আবার কার্তিক মাসে। আয়োজনে বড়সড় না হলেও ভক্তির গভীরতা নজর কাড়ে। বিশেষ করে কার্তিক মাসের পুজোয় ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
চারদিক জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির এলাকায় আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন পড়েনি। তাই রাতের অন্ধকারে দীপজ্বালা, ঢাকের আওয়াজ আর মন্ত্রোচ্চারণে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়। অনেকেই গাড়ি নিয়ে রাতভর সেখানে পৌঁছে যান শুধু এই পুজোর আবহ অনুভব করতে। পুজো দেখা যেমন ভক্তির, তেমনি প্রকৃতির সঙ্গে একধরনের অ্যাডভেঞ্চারেরও অভিজ্ঞতা এনে দেয়।