মালদার তৃণমূল নেতা, পেশায় রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরি করে আট বছর ধরে কোটি কোটি টাকার মাল তোলার অভিযোগে ৭ কোটি টাকা জরিমানা করল খাদ্য সরবরাহ দফতর। পাশাপাশি ওই রেশন ডিলারের লাইসেন্সও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত রেশন ডিলার পাল্টা খাদ্য দপ্তরের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
মালদার বৈষ্ণবনগর বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক চন্দনা সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত তথা অঞ্চলের সভাপতি কালিয়াচক ৩ ব্লকের রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামকে ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা করলো জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর। খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যেভাবে সরকারি খাদ্য সামগ্রীতে দুর্নীতি করেছেন এই ডিলার,তার জেরেই এই বিপুল টাকার অংকের জরিমানা করা হয়েছে।
অভিযোগ, কালিয়াচক ৩ নং ব্লকের সাহাবানচক অঞ্চলের রেশন দুর্নীতি ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি রেশন কার্ডের অপব্যবহার ও অবৈধ বন্টন করেছেন। আশরাফুল ইসলামের অধীনে মোট ১৩ হাজার রেশন কার্ড ছিল। যার মধ্যে ৭০০০ হাজার কার্ড অবৈধভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও কিছু কার্ড রয়েছে যাদের বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। এই কার্ডগুলোর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে রেশন সামগ্রীর অস্বচ্ছ ও অবৈধ বন্টন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়েছে। জেলা খাদ্য দফতরেও এই ডিলারের বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রমাণসহ গণ-স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ করেছিলেন এলাকার রেশন গ্রাহকদের একাংশ। এরপরই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। তাতেই একের পর এক রেশন সামগ্রী বন্টনে অনিয়ম,খাদ্য সামগ্রী বিলির ক্ষেত্রে কোনরকম স্লিপ ইস্যু না করা,রেশন কার্ডের অপব্যবহার করা সহ একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ে বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
যা গত আট বছর ধরে এই রেশন ডিলার নিজের দোকানে থেকেই এরকম বেআইনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।এরপরই এই রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করে জরিমানা বাবদ ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকার জরিমানা ধার্য করে জেলা খাদ্য দফতর। জেলা খাদ্য নিয়ামক শাশ্বতসুন্দর দাস বলেন, "কালিয়াচক ৩ ব্লকে সাহাবানচক এলাকার ওই রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৮৬ হাজার টাকার বিপুল অঙ্কের জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। রেশন দুর্নীতির ক্ষেত্রে এটাই সব থেকে বড় শাস্তি। গত আট বছর ধরে যেভাবে রাজ্য সরকারের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করেই এই বিপুল অঙ্গের জরিমানা করা হয়েছে। যদিও ঘটনাটি আমার মালদা জেলায় দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঘটেছে। মালদা সদর খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকেই তদন্ত করেই এই জরিমানাটি করা হয়েছিল।"
অভিযুক্ত এই রেশন ডিলার আশরাফুল ইসলামকে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শুধু জানান উচ্চ আদালতে দারস্থ হচ্ছেন। এই বিষয়ে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী জানান, বিষয়টি খাদ্য দফতর দেখছে। এর সাথে দলের কোন ব্যাপার নেই। দুর্নীতি করে থাকলে ও প্রমাণ হলে আইনি পথেই তার ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অন্যদিকে বিজেপি নেতা অম্লান ভাদুড়ি জানান, তৃণমূলের একজন জনপ্রতিনিধি রেশন ডিলার এই আশরাফুল ইসলাম। এই এলাকাটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় ব্যাপক হারে অনুপ্রবেশ ঘটে। সেক্ষেত্রে কাদের কাদের ভুয়ো রেশন কার্ড করে দিয়েছেন তিনি সেটারও তদন্ত করা উচিত।