North Bengal Disaster: গত কয়েকদিনের লাগাতার বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরের পাহাড় থেকে সমতল। প্রবল বর্ষণে জলস্তর বেড়েছে উত্তরের নদীগুলিতে। এদিকে পাহাড়ে ধস অব্যাহত। নতুন করে ধস নেমেথছে বৃহস্পতিবারও। আর এই কারণেই আতঙ্কে ঘুম উড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বুধবার সকালে ফুলহরের জলের তোড়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল এক কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত বাঁধ। তবে জলের স্রোতে বাঁধ ভাঙলো না গত বছরের মতো রাতের অন্ধকারে কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধ কেটে দিল, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। শুধুমাত্র ভূতনির সাধারণ মানুষ নয় এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর চরমে। খোদ মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের অভিযোগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি মিলিতভাবে ষড়যন্ত্র করে রাতের অন্ধকারে দক্ষিণ চন্ডিপুরের বাঁধ কেটেছে।
অন্যদিকে ভূতনির হীরানন্দপুর অঞ্চলের কালুটোনটোলার কাছে ফুঁসছে গঙ্গা। নতুন রিং বাঁধ বরাবর জল। নতুন বাঁধের নিচ দিয়ে অল্প অল্প করে জল ঢুকতে শুরু করেছে সংরক্ষিত এলাকায়। কোনওরকমে বালির বস্তা দিয়ে জল আটকানোর চেষ্টা করছে সেচ দপ্তর। সেই বাঁধের উপর বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছে অসংরক্ষিত এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় আট শতাধিক পরিবার। যে কোনও মুহূর্তে গঙ্গার প্রচন্ড স্রোতে নতুন রিং বাঁধ ভেঙে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকায় জল ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। আর এই আশঙ্কা সত্যি হলে গঙ্গা ও ফুলহর এই দুই নদীর মিলিত প্লাবনে জলের তলায় যাবে সমগ্র ভূতনি। গত বছরের চেয়েও ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
গত কয়েকদিন আগে থেকেই হলুদ সতর্কতা অতিক্রম করে বইছে ফুলহর। বুধবার সকালের হিসেব অনুযায়ী, ফুলহরের জলস্তর ২৮.২১ মিটার যা চরম বিপদসীমা থেকে মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার নিচে। অপরদিকে গঙ্গা চরম বিপদসীমা থেকে ৭১ সেন্টিমিটার উঁচুতে বইছে। গতবছর বন্যার সময় ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়লে লোকালয় থেকে জল নিকাশির উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে ভুতনির একদল মানুষ ভূতনি দক্ষিণ চন্ডিপুর সুইচগেটের কাছে বাঁধ কেটে দেয়। পরে সেই বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে ফুলহরের জল ঢুকে প্লাবিত করে ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকা।
জানা গিয়েছে, কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে রায়ডাক-১ নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় নদীপাড় ভাঙতে শুরু করেছে তুফানগঞ্জ-১ব্লকের অন্দরানফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯/১৯৫ নম্বর বুথের উল্লারঘাট এলাকায়। আতঙ্কে রয়েছেন দুই শতাধিক পরিবার। তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই রায়ডাক-১ নদী। মঙ্গলবার রাত থেকে ব্যাপক হারে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় বেশ কয়েক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচলের অনুমতি দেয় প্রশাসন। এর মধ্য়েই শুক্রবার বিরিকদাড়ায় ধসের কারণে দুবার বন্ধ করে দিতে হয়, জাতীয় সড়কটি। এরপর শনিবার সকালে ফের ধসে বন্ধ হয়ে যায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ২৯ মাইলে জাতীয় সড়কের একটা বড় অংশ আজ সকালে তিস্তায় তলিয়ে যায়। মাঝেও অবশ্য় বিভিন্ন জায়গায় ধস নামছিল। ফলে কখনও খুলে কখনও বন্ধ করে কখনও যানবাহন ঘুরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে প্রশাসন। এদিন সকালে ফের ২৮ মাইলে সেলফিদাঁড়ার কাছে ধস নেমে রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ফের ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে আটকে পড়ে গাড়ি-যানবাহন।