সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান শেখ। দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ডও করেছে শাসকদল তৃণমূল। তার মধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ দাবি করলেন, শাহজাহানকে ফাঁসানো হয়েছে! সন্দেশখালির নেতার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা আগে কেন শোনা যায়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী। এ নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা।
উদয়ন গুহ বলেন, "কায়দা করে শেখ শাহজাহানকে (Sheikh Shahjahan) ফাঁসানো হয়েছে৷ এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। যেই ইডির (ED) ওপর হামলা হল সেই নানান অভিযোগ উঠতে শুরু করল।" কোচবিহারের এক সভা থেকে শাহজাহানের ‘পাশে’ দাঁড়িয়ে এমনটা বললেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ (Udayan Guha)।
এদিন তিনি আরও বলেন, কেউ একজন যদি নির্বাচনের সময় দলে না থাকে তবে তো অবশ্যই ক্ষতি। সে শেখ শাহজাহান হোক বা যেই হোক না কেন। যে ক্ষতি হবে তা অন্যভাবে পূরণ করা হবে৷ তাঁর অভিযোগ, দিনহাটায় (Dinhata) পিঠেকাণ্ডে অনেককে জড়ানোর চেষ্টা করেছিল বিজেপি (BJP)৷ তবে সেভাবে প্রতিবাদ করায় বিজেপির লাভ হয়নি। তাঁর দাবি, অভিযোগ প্রমাণ হলে বোঝা যাবে শেখ শাহজাহান কতটা দোষী। তবে হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি বা কবিরাজি যে পদ্ধতিতে হোক কোচবিহার লোকসভা আসন তৃণমূলকে জিততেই হবে বলে জানান উদয়ন গুহ।
বুধবার রাতে শাহজাহানকে মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরেই শাহজাহানকে দল থেকে ছ’বছরের সাসপেন্ড করে তৃণমূল। সমস্ত দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এর মধ্যে উদয়ন গুহর বক্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারের রবীন্দ্র ভবনে দলের ব্রিগেড সভার প্রস্তুতি বৈঠকে হাজির ছিলেন উদয়ন। সেখানে শাহজাহান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য, শাহজাহানকে নিয়ে তাঁর মনে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর পেলে তবেই তিনি বুঝতে পারবেন, শাহজাহান কতটা দোষী। সিপিএমের প্রসঙ্গ তুলেও তিনি দাবি করেন, কেন এত দিন শাহজাহানকে নিয়ে সিপিএম প্রকাশ্যে কিছু বলেনি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উদয়ন। তাঁর দাবি সিপিএম বিধায়করা কোনওদিন সন্দেশখালি নিয়ে কোনও রকম অভিযোগ করেননি। তাহলে হঠাৎ এসব ঘটনা কোথা থেকে এল?
গত ৫ জানুয়ারি রেশন ‘দুর্নীতি’ মামলায় সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন শাহজাহান। তার পর থেকেই তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। যদিও আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা। শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে সেই বিক্ষোভের আঁচ বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতি দিনই অশান্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। মহিলারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এবং শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগ, গ্রামে শাহজাহান অত্যাচার চালাতেন। জমি জবরদখলের অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।