Siliguri Fake Certificate Case: খড়িবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে ইস্যু হওয়া জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ফের চাঞ্চল্য। তদন্তে জানা গিয়েছে, এই হাসপাতাল থেকেই জারি হয়েছে একের পর এক জাল শংসাপত্র, তার ঠিকানা নাকি কলকাতার কালীঘাট, হরিশ মুখার্জি রোড, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির এলাকাও! শুধু তাই নয়, চক্রের নাগাল মিলেছে সিকিম ও বিহারের একাধিক জেলাতেও।
রবিবারই খড়িবাড়ি হাসপাতালের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর তথা তৃণমূল নেত্রীর ছেলে পার্থ সাহাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও কয়েকজন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ অক্টোবর রাতে খড়িবাড়ি থানায় মামলা দায়ের হয়।এরপর নড়েচড়ে বসে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। খড়িবাড়ি হাসপাতালের মে থেকে জুলাই, এই তিন মাসে তৈরি ১,০১৪টি শংসাপত্র খতিয়ে দেখা হয়। প্রথম দফায় ৮৪৪টি জাল শংসাপত্রের হদিস মেলে। শনিবার স্ক্রুটিনির পর দেখা যায়, সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭০। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই সেই তালিকার সফট কপি পুলিশকে দিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, জাল শংসাপত্র পৌঁছে গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়িয়ে ভিনরাজ্যে বিহার, সিকিম, এমনকী কলকাতার টালিগঞ্জ, গার্ডেনরিচ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, দমদম, সিঙ্গুরেও। বহু পুরনো জন্মতারিখের শংসাপত্র তৈরি হয়েছে চলতি বছরেই।
উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার হরিশ মুখার্জি রোডের অভিরাজ সিংয়ের জন্মতারিখ ২২ ডিসেম্বর, ২০১২। অথচ রিপোর্টিং তারিখ ১০ জুন, ২০২৫! কালীঘাটের পূজা গুপ্তার জন্মতারিখ ১০ মে, ২০২২, আর শংসাপত্রের রিপোর্টিং তারিখ ১৪ জুলাই, ২০২৫। গার্ডেনরিচের মহম্মদ আজিবের জন্ম শংসাপত্রেও একই কাণ্ড। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, এই জাল নথিগুলি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথায় এবং কীভাবে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট হদিস নেই, এটাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক।
বালুরঘাটের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘ভিনদেশি নাগরিকদের এনে ভোটার তালিকায় নাম তুলছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর এলাকার ঠিকানায় জাল সার্টিফিকেট ইস্যু হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেন্দ্রীয় তদন্ত জরুরি।’’ শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের প্রশাসন তথ্য লোপাটের চেষ্টা করবে। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত প্রয়োজন। বড় মাথারাও জড়িত থাকতে পারে।’’ এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ভবানীপুরে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পরিকল্পনা করে ভবানীপুরকে বহিরাগতদের দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ জাল শংসাপত্র-কাণ্ডে নতুন তথ্য সামনে আসায় সেই মন্তব্য নিয়েই এখন ফের জোর চর্চা।
এদিকে, পুলিশ হেপাজতে থাকা চক্রের মূল পান্ডা পার্থ সাহা ও নকশালবাড়ি বিডিও অফিসের বিএসকে কর্মী নবজিৎ গুহ নিয়োগীকে দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। রবিবার দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করেন নকশালবাড়ির এসডিপিও আশিস কুমার ও খড়িবাড়ির ওসি অভিজিৎ বিশ্বাস। খড়িবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের সেকেন্ড মেডিকেল অফিসার তথা রেজিস্ট্রার ডাঃ প্রফুলিত মিঞ্জ ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সফিউল আলম মল্লিককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। পার্থর মা ও স্ত্রীকেও তলব করেছে পুলিশ। যদিও তদন্তের স্বার্থে কেউই মুখ খুলছেন না।