পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। ঘটনাস্থল মালদা। অভিযোগ, অন্তত দেড়শো পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা জমা পড়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি উধাও! এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বাণীব্রত দাস।
উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ১০ হাজার টাকা। পড়াশুনোর সুবিধার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সরকারের পাঠানো টাকা প্রকৃত পডুয়াদের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে না। বরং ভূতুড়ে অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে সরকারি টাকা। কাঠগড়ায় মালদার তিনটি স্কুল। দেখা যাচ্ছে, তালিকায় ছাত্রদের নাম রয়েছে, অথচ অ্যাকাউন্ট নম্বর বদলে গিয়েছে। সেই অ্যাকাউন্টেই চলে গিয়েছে টাকা।
কী রকম দুর্নীতি হয়েছে? হবিবপুরের কেন্দপুকুর হাইস্কুলে ৯১ জন পড়ুয়ার অ্যাকাউন্ট নম্বর রহস্যজনকভাবে বদলে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হবিবপুর থানায় এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগে স্কুলের এক ক্লার্কের নাম দেওয়া হয়েছে। তিনিই ওই ভুল তথ্য দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ওই স্কুলে তদন্তে পৌঁছয় হবিবপুর থানার পুলিশ।
গরমিলের কথা স্বীকার করেছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কনুয়া ভবানীপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা চৌধুরী। তিনি বলেন,'৩৪ জন ছাত্রের টাকা গায়েব! স্কুলের তৈরি তালিকাতেই ছাত্রদের নামের পাশে রয়েছে ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর'। একইভাবে মালদার গাজোলের চাকনগর পঞ্চায়েতের ডোবাখোকশান বৈরডাঙি ক্ষান্তরানি হাইস্কুলে আরও ১৮ জন ছাত্রের টাকা উধাও! চলে গিয়েছে অন্য অ্যাকাউন্টে। ওই দু'টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পুলিশে অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর।
ট্যাবের টাকায় গরমিল নিয়ে রাজ্যজুড়ে হইচই শুরু হওয়ার পর মালদার জেলা শিক্ষা দফতর বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ধরা পড়ে দুর্নীতি। ট্যাবের টাকা গরমিলের ঘটনায় তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মালদার জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া।
জেলা স্কুল পরিদর্শক বাণীব্রত দাস বলেন,'প্রধান শিক্ষকরা সরকারি নিয়ম মেনে চলেননি। ছাত্র-ছাত্রীদের নাম ও অ্যাকাউন্ট নম্বর যাচাই করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সার্টিফিকেট মেলার পর তা বাংলা শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করা হয়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সেটা অনুমোদন করেন। এরপর ছাত্রছাত্রীরা রাজ্য থেকে টাকা পান'। যোগ করেন,'ভুল নাম থাকা সত্ত্বেও শংসাপত্র আপলোড করেছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রধান শিক্ষকদের গাফিলতি স্পষ্ট। তাঁদের নামে এফআইআর করা হয়েছে'।
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। দক্ষিণ মালদার জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন,'এই সরকারের আমলে আবাস থেকে শুরু করে শিক্ষা-সহ একাধিক সরকারি পরিষেবায় দুর্নীতির পাহাড় জমেছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছেন থানায় অভিযোগ করতে। হুঁশ ফিরছে না রাজ্যের শাসকদলের। তদন্তের নামে মানুষের সঙ্গে প্রহসন চলছে। তৃণমূল নেতারা দুর্নীতির উন্নতির পাহাড়ে চলে গিয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে তদন্ত হোক। দোষীদের শাস্তি হোক'।
জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস কুণ্ডু জানান,'ট্যাবের বিষয়টি বড় ঘটনা। এই রাজ্যে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত আছে। অভিযোগ হয়েছে, অবশ্যই তদন্ত হবে। অভিযুক্তদের শাস্তিও হবে। বিজেপির নেতাদের এইসব নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই'।
সংবাদদাতা- মিল্টন পাল