TMC Block President Arrest: মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পরই নড়চড়ে বসেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ থাকলেও এতদিন কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি কোনও শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। অবশেষে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় অভিযান শুরু করল শিলিগুড়ি পুলিশ। প্রথম দিনই অভিযান চালিয়ে শিলিগুড়ি লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ব্লকের তৃণমূল সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্য দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতার করল পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেবাশিসের বিরুদ্ধে জমি দখল, নথি বিকৃত করা, মারধর, খুনের চেষ্টা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে তাঁকে জেরা করে পুলিশ ও শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দেবাশিসকে আদালতে পেশ করা হবে।
রাতেই শিলিগুড়ি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় দেবাশিসকে। সেখানে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার প্রচুর তৃণমূল কর্মী সমর্থকর জমায়েত হয়। যদিও শিলিগুড়ি এলাকার কোনও নেতাকে কোথাও দেখা যায়নি। পরে থানা থেকে বের করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দেবাশিস প্রামাণিককে শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৪(প্রতারণার উদ্দেশ্যে ভুয়ো নথি তৈরি), ৩৮৪(বলপ্রয়োগ), ৩০৭(খুনের চেষ্টা) ও ১২০ (বি) (ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এক সময় কংগ্রেস করলেও পরে রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূলে যোগ দেন দেবাশিস প্রামাণিক। ফুলবাড়ি এলাকায় তাঁর প্রাসাদোপম বাড়ি রয়েছে। বিভিন্ন সময় দেবাশিসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেসব অভিযোগ থানা পর্যন্ত পৌঁছয়নি। পৌঁছলেও তা নিয়ে মামলা হয়নি। সাধারণ মানুষের সাহসই ছিল না, সেসব নিয়ে থানা-পুলিশ করা।২০১১ সালে ওই বিধানসভা থেকে জিতেই প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন বর্তমানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব (Goutam Deb)। তিনি বিধায়ক হওয়ার পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী হন। গৌতম দেবের সঙ্গে সব সময় দেবাশিসকে দেখা গিয়েছে দীর্ঘদিন।
২০১৮ সালে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সদস্য হন দেবাশিস। ওই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনে কার্যত তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা। ডাবগ্রাম ফুলবাড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচন, বিধানসভা ও লোকসভা সবেতেই ধারাবাহিকভাবে ফল খারাপ হয় তৃণমূলের। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রেও প্রায় ৬৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী। ওই ঘটনায় দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়।
লাগোয়া শিলিগুড়িতেও ফল ভাল হয়নি। দলের তদন্তে উঠে আসে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকায় জমির কারবার মাত্রাছাড়া হয়ে পড়েছে। যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী। সম্প্রতি শিলিগুড়ি সেবক রোডে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের জমি দখলের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। যার জন্যও মুখ পোড়ে তৃণমূলের। তাই নবান্নের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো একদিকে যেমন বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে, অন্য দিকে জমির কারবার বন্ধেও পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছে।
গত সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবান্নয় পুরসভাগুলিকে নিয়ে ডাকা বৈঠকে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে সক্রিয় জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকার পাঘালুপাড়ার জনৈক বিমল রায় নিউ জলপাইগুড়ি থানায় দেবাশিস প্রামাণিকের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।