Friday North Bengal Bandh: উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে (Kaliaganj) পরপর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার ১২ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গ বনধের (North Bengal Striike) ডাক দেয় বিজেপি (BJP)। শুক্রবার দিনভর উত্তরবঙ্গে বনধের সমর্থনে মিছিল, পিকেটিং করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। পাল্টা মিছিল করে বনধের বিরোধিতায় নামে তৃণমূলও। গোটা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে পুলিশ পিকেটিং ছিল। একাধিক জায়গায় বনধ সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পুলিশেরও। শিলিগুড়ি সহ নানা জায়গায় বহু বনধ সমর্থককে গ্রেফতার করাও হয়। কিন্তু নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে বিজেপিকে এর আগে তেমনভাবে বনধ রাজনীতিতে নামতে দেখা যায়নি। এবার বনধ ডাকার পাশাপাশি পথে নেমে তা সফল করতে মরিয়া প্রয়াস দেখা গিয়েছে। কেন?
এ নিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক নেতারা কী বলছেন?
প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন যে তাঁরা বনধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। তাহলে কী এমন হল যে তাঁরা বনধের পথ বেছে নিলেন? প্রত্যেকের জবাবও একটাই এর আগে এমন পরিস্থিতি ছিল না। রাজ্যের পরিস্থিতিই তাঁদের এভাবে পথে নামতে বাধ্য করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী দাবি করেছেন, "রাজ্যে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তাঁদের পথে নামতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। মুখ্য়মন্ত্রী মিথ্যা কথা বলছেন। অপরাধীদের আড়াল করছেন, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। বনধ না করে কোনও উপায় ছিল না।" রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে সার্বিকভাবে নাড়া দেওয়ার দরকার ছিল, সে কারণেই বনধ করা।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন অবশ্য প্রথমেই বনধ করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে্ছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন এই বনধ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থেই। তিনি বলেন, "বিজেপি বনধের রাজনীতি করে না ঠিক কথা। মানুষের অসুবিধা আমরাও চাই না। কিন্তু রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা যতদিন না ঠিক হবে, একের পর অপরাধী যতদিন ধরা পড়বে না, ততদিন এভাবেই প্রতিবাদ হবে। প্রয়োজনে আরও তীব্র আন্দোলন হবে।" হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যাধ্যায় বলেন,"আমরা সত্যিই বনধ করতে চাই না। কিন্তু রাজ্যে এমন পরিস্থিতিও তো আগে ছিল না। প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্ষণ হচ্ছে। অমানবিকভাবে দেহ টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ রাজ্য সরকার নির্বিকার। উল্টো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এগুলো বন্ধ করতে হলে, রাজ্য সরকারকে নাড়া দিতে হলে বনধ ছাড়া উপায় নেই।"
প্রসঙ্গত, নাবালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কালিয়াগঞ্জ। মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এদিকে থানা জ্বালানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে গিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। গুলিতে বুধবার রাতে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর অঞ্চলে মৃত্যুঞ্জয় বর্মন নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, সেই এলাকায় রাতে পুলিশ পৌঁছয়। এর আগে কালিয়াগঞ্জে উত্তেজনার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয় বেশ কয়েকজনকে। তাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে বচসা বাধে। সেই সময় পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। বর্তমানে থমথমে গোটা এলাকা। পুলিশের বিশাল বাহিনী পৌঁছছে এলাকাস্থলে।
কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কালিয়াগঞ্জ। এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি তুলে কালিয়াগঞ্জ থানা ঘেরাও কর্মসূচি নেয় রাজবংশী ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। থানায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া, পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সরকার মৃত ছাত্রীর পরিবারের পাশে রয়েছে। এর তদন্ত হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, বিজেপি বিহার থেকে লোক এনে তাণ্ডব চালিয়েছে। যারা গুন্ডামি করেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইতিমধ্যেই কালিয়াগঞ্জের ঘটনায় রাজ্য পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি ওই নাবালিকার ময়নাতদন্তের ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নেতৃত্বাধীন একক বেঞ্চ আজ এই নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশকে এনসিপিসিআর-এর সঙ্গে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে।