Advertisement

বয়স সংখ্যা মাত্র! মেয়ের সঙ্গে বিএ পাস ৪৫ বছরের মায়ের, লক্ষ্য এবার এমএ

১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন সঙ্গীতা। সে বার গণিতে ফেল করেন। তার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি। তার কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে যায় সঙ্গীতার। তারপর সংসার আর সন্তান। সংসার করার মাঝেও চোখে স্বপ্ন ছিল কিছু করার।

বয়স সংখ্যা মাত্র! মেয়ের সঙ্গে বিএ পাশ ৪৫ বছরের মায়ের, লক্ষ্য এবার এমএবয়স সংখ্যা মাত্র! মেয়ের সঙ্গে বিএ পাশ ৪৫ বছরের মায়ের, লক্ষ্য এবার এমএ
Aajtak Bangla
  • আগরপাড়া,
  • 27 Aug 2025,
  • अपडेटेड 6:40 PM IST
  • ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন সঙ্গীতা
  • তারপর পড়াশোনার ইতি টেনেছিলেন

বয়স শুধু সংখ্য। এই কথাটাকেই সত্যি করে দেখালেন উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ার সঙ্গীতা দে। ১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গণিতে অকৃতকার্য হয়ে পড়াশোনার ইতি টেনেছিলেন। তারপর বিয়ে, সংসার, সন্তান...। কিন্তু থেমে যাননি। ২০১৯ সালে ফের মাধ্যমিকে বসেন, ২০২২-এ ছোট মেয়ের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক, আর এবার একই কলেজ থেকে মেয়ের সঙ্গে বিএ পাশ করলেন। তাও আবার ৭৫% নম্বর পেয়ে। নম্বরের দিক থেকে যদিও মেয়ের থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছেন তিনি। ছোট মেয়ে সহেলী পেয়েছেন ৮০ শতাংশ নম্বর। সংসার সামলে কলেজ, টিউশনি, সেলাইয়ের কাজ আর সংস্কৃতির চর্চ। সব কিছু একসঙ্গে করে দেখালেন যে ইচ্ছা থাকলেই রাস্তা মেলে। এবার মা-মেয়ের লক্ষ্য একসঙ্গে সাংবাদিকতা নিয়ে এমএ করা।

১৯৯৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন সঙ্গীতা। সে বার গণিতে ফেল করেন। তার পর আর পড়াশোনা করা হয়নি। তার কিছুদিন পরেই বিয়ে হয়ে যায় সঙ্গীতার। তারপর সংসার আর সন্তান। সংসার করার মাঝেও চোখে স্বপ্ন ছিল কিছু করার।  তারজন্য নার্সিং ও বিউটিশিয়ান কোর্স করতে যান। কিন্তু মাধ্যমিকের সার্টিফিকেট না থাকায় সবকিছুই আটকে যায়। এরকম পরিস্থিতিতেই ছেড়ে দেওয়া পড়াশোনা আবার শুরু করেন। ২০১৯ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে আবার মাধ্যমিক দেন সঙ্গীতা। পরের ধাপ উচ্চমাধ্যমিক। সে জন্য নতুন করে স্কুলেও ভর্তি হন সঙ্গীতা। ছোট মেয়ে সহেলীও তখন একাদশ শ্রেণিতে। মা-মেয়ের আলাদা স্কুল ছিল। মা পড়তেন বেলঘরিয়ার নন্দননগর আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মেয়ে পড়তেন বেলঘরিয়া মহাকালী গার্লস হাইস্কুলে। ২০২২ সালে মেয়ের সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক দেন সঙ্গীতা। মা পান ৪৩৮, মেয়ে ৩৯৭।

উচ্চমাধ্যমিক পাস করেও থামেননি সঙ্গীতা। ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শ্যামবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজে। সেখানে তিন বছর কাটিয়ে জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন বিএ পাশ করেছেন মা-মেয়ে। চূড়ান্ত সেমিস্টারের ফলপ্রকাশ হয়েছে শুক্রবার। মেয়ে পেয়েছেন ৮০ শতাংশ নম্বর, মা ৭৫ শতাংশ। এবার স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা মেয়ের সঙ্গেই করতে চান মা।

Advertisement

আরও পড়ুন

তবে সংসার সামলে মাধ্যমিক পাস, উচ্চমাধ্যমিক পাস, তারপরে বিএ পাস করার যাত্রাটা সহজ ছিল না সঙ্গীতার। উচ্চমাধ্যমিকের সময় ব্যাগে ড্রেস নিয়ে স্কুলে চলে যেতেন। সেখানে ড্রেস পরে তবেই ক্লাসঘরে ঢুকতেন। ক্লাস শেষ হলে শাড়ি পরে আবার বাড়ি ফিরতেন। কলেজে পড়ার সময় সকালে সকলের জন্য রান্না করা, তার পর পাড়ার কয়েকজন শিশুকে পড়ানো, তারপরে তৈরি হওয়া, তার পর কিছু খেয়েই দৌড়। গত তিন বছর ধরে এটাই ছিল সঙ্গীতার রোজকার রুটিন। সংসার চালানোর জন্য টুকটাক সেলাইয়ের কাজও করেন সঙ্গীতা।

নিজের সাফল্যের কথা তুলতেই সঙ্গীতা বলেন,'এই বয়সে এসে যে বিএ পাস করব সেটা কখনও ভাবিনি। মেয়েরা যখন পড়াশোনা করত আমিও বই নিয়ে বসতাম। তখন মেয়েরা আমাকে আবার পড়াশোনা শুরু করতে বলে। নার্সিং ট্রেনিংয়ের জন্য আবেদন করেছিলাম। মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেটের জন্য হয়নি। মাধ্যমিক করেছি, উচ্চমাধ্যমিক করেছি। উচ্চমাধ্যমিকের সময় আমার স্কুল আর আমার মেয়ের স্কুল আলাদা ছিল। আমরা একই কলেজে, একই সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছিলাম।'

আর মাকে টেক্কা দেওয়া সহেলী বলেন, 'ভাল লাগছে, একসঙ্গে আমরা কলেজে গিয়েছি, এসেছি। মায়ের খাটনি বেশি হয়েছে। সকালে সমস্ত কাজ করে তবেই কলেজ যেতে হত। তিন বছর মায়ের সঙ্গে পড়ে কোনও অসুবিধা হয়নি। দু'জনেই আমরা মাস্টার্স করার ফর্ম ফিলআপ করেছি। নাম উঠলে একসঙ্গে মাস্টার্স করব জার্নালিজম নিয়ে।'

Read more!
Advertisement
Advertisement