প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন মাজার ঘিরে উৎসবের আমেজে মেতে ওঠেন হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এক সম্প্রীতির মেলবন্ধনের উৎসব এই মাজারকে ঘিরে। প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে মাজারে চাদর চড়িয়ে মানত করেন মনের বাসনা পুরণের আশায়। মানুষের বিশ্বাস চাদর চড়িয়ে অনেকের মনের বাসনা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাসে ভর করে বছরের পর বছর ধরে এইভাবেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনপ্রিয় হয়েছে এই মাজার।
বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের দ্বারকেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত গ্রাম বীরসিংহপুর। একসময় এই গ্রাম ছিল বর্ধমান রাজার অধীনে। এই গ্রামের বর্ধমান রাজার সেরাস্তা ছিলেন সুর্যকান্ত দে। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে মুসলিম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিহার থেকে বিরসিংহগ্রামে হাজির হয়েছিলেন মকদুম শাহ ও নিরগীন শাহ নামে দুই সুফি সাধক। এই গ্রামের সেরেস্তা সুর্যকান্ত দে দুই সুফী সাধককে সাধনার জন্য দ্বারকেশ্বর নদের তীরে জায়গা দেন। পরবর্তীকালে এই স্থানে সাধনা করেন নিরগীন শাহ।
তাঁর মৃত্যুর পরই সমাধিস্থ করে তৈরি করা হয় মাজার। যা আজ হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কাছে হয়ে উঠে পবিত্র স্থান। বছরের পর বছর ধরে মানুষের বিশ্বাসের ওপর ভর করে জনপ্রিয়তা বেড়েছে এই মাজারের। হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই উৎসব এবং মাজার পরিচালনার জন্য কমিটিও। এই কমিটি পরিচালনা করেন বীরসিংহপুরের গ্রামের এই উৎসব।
প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে মাজারে চাদর চড়িয়ে অনেকেই মানত করেন মনের বাসনা পূরণের আশায়। বিশেষ এই পবিত্র দিনে বাঁকুড়া জেলা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য মানুষ হাজির হন দ্বারকেশ্বর নদের তীরে বীরসিংহপুর গ্রামের প্রান্তে অবস্থিত মাজারে। চাদর চড়ানো, নদীর চরে পিকিনিক, দিনভর আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে কেটে যায় একটা দিন। বছরের এই দিনকে কেন্দ্র করে নদীর চরে বসে মেলাও, চলে বিকিকিনি।
সংবাদদাতা- নির্ভীক চৌধুরী