দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে রবিবার। ভারতের ৯৫ জন মৎস্যজীবী দেশে ফিরেছেন। সোমবার সেই সমস্ত মৎস্যজীবীদের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবারই গঙ্গাসাগরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেক মৎস্যজীবীর পরিবারের হাতে এদিন ১০ হাজার টাকাও তুলে দেন তিনি। মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যও করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দু'মাস আগে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিল ৬টি ভারতীয় ট্রলার। তখন ওই ৯৫ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশের জল সীমায় ঢুকে পড়েন। তারপরই বাংলাদেশের উপকূল রক্ষা বাহিনী তাঁদের গ্রেফতার করে। এর পরপরই মৎস্যজীবীদের একটি সংগঠন প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়। মৎস্যজীবীদের ঘরে ফেরাতে উদ্যোগী হন খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন বাংলাদেশ থেকে ফেরা মৎস্যজীবীদের সঙ্গে দেখা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কয়েকজন মৎস্যজীবী খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি ওদের কাউকে কাউকে মারধার করা হয়েছে। হাত বেঁধে মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে। হাতে-পায়ে মারা হয়েছে, ওরা আহত। পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকে আগত মৎসজীবীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মৎস্যজীবীদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী এদিন আর্থিক সাহায্য এবং কিছু উপহার তুলে দেন । মৎস্যজীবীদের সম্পর্কে মমতা বললেন, চোখে জল এসে যাওয়ার মতো ঘটনা। আমরা কী করে খবর পেলাম জানেন? আমরা সরকারে আসার পরে একটা করে মৎস্যজীবী কার্ড দিয়েছিলাম। এঁরা কোথাও চলে গেলে বা নিখোঁজ হলে আমরা জানতে পারি। পুলিশের মাধ্যমে এবং মন্টুরাম পাখিরার মাধ্যমে জানতে পারি। আমরা দুই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আজ আপনারা যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের মুখে হাসি ফুটেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৯৫ জন মৎস্যজীবী বাংলাদেশের জেলে ছিলেন। অনেক চেষ্টা করে তাঁদের ফেরত নিয়ে এসেছি। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি খুব করেছেন।’ স্থানীয় বিধায়ক থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
তবে তাঁদের কয়েকজনের শারীরিক অবস্থা দেখে খোঁজখবর নিয়ে যা জানলেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর চোখে জলও চলে আসে। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অভিযোগ তুললেন, বাংলাদেশে জেলবন্দি অবস্থায় মৎস্যজীবীদের উপর অত্যাচার হয়েছে, যার জেরে অনেকে পা-কোমরে চোট পেয়েছেন। হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে তাঁদের। বললেন, ”বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। আমরা ওদের ভালোবাসি। কিন্তু একটা পরিস্থিতি এমন হল যে চোখে জল এসে যাওয়ার মতো।” জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন, আহত মৎস্যজীবীদের ভালোভাবে চিকিৎসার জন্য। মৎস্যজীবীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জলের মধ্যে মধ্যে অনেক সময় সীমানা বোঝা যায় না। তবে সাবধানে থাকতে হবে। সীমানার বাইরে যাবেন না। তাতে মাছ উঠলে উঠবে, জীবন বাঁচলে অনেক মাছ আসবে।