বোলপুরের আইসিকে কুকথা বলে কিছুদিন আগেই বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। এবার আরও এক আইসি রাজ্যের মন্ত্রীর নিশানায়। পুলিশি ভূমিকা নিয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সরাসরি থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন সিদ্দকুল্লা চৌধুরী। শুধু তাই নয়, গভীর রাতে সাধারণ মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে পুলিশি তল্লাশি চালানোর পদ্ধতি নিয়েও প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পূর্ব বর্ধমানের সাতগাছিয়ার বিধায়ক কার্যালয় থেকে মন্ত্রী নিজেই মন্তেশ্বর থানা ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেন। মন্ত্রী বলেন, 'অনেক অভিযোগ আসছে মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে। এটা শুনতে আমার কষ্ট হচ্ছে।' মন্ত্রীর অভিযোগ,'আমি শুনতে পাচ্ছি, রাতের অন্ধকারে আপনি (আইসি) নিজে বাড়ির দরজায় লাঠি দিয়ে ঠকঠক করছেন। মেয়েরা আতঙ্কিত হয়ে দরজা খুলছে।' রাজ্যের শাসকদলের মন্ত্রীর মুখে এমন কটাক্ষ ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও জেলার পুলিশ প্রশাসন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মন্ত্রীর অভিযোগ, 'থানার আইসি একতরফা হয়ে গিয়েছেন এবং গোষ্ঠীস্বার্থে কাজ করছেন।' নাম না করেই তিনি নিশানা করেন মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখকেও, যার সঙ্গে মন্ত্রীর সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরে তলানিতে। আইসি পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, 'যদি আপনি না মানেন, তাহলে বাধ্য হয়ে হয়তো আমাকে থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিতে হবে। মন্ত্রী যাবে, এমএলএ যাবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলটা বাঁকানোর জায়গায় তৈরি হবে।'
উল্লেখ্য, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান ৩ জুলাই তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক ব্ন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই সময় মন্ত্রীর কনভয় আটকে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর হয়। সেই ঘটনার পরেই মন্ত্রী মন্তেশ্বর আইসিকে কাঠগড়ায় তোলেন। উপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে না পারায় আইসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সিদ্দিকুল্লা চৌধথুরী। নিশানা থেকে বাদ যাননি তাঁরই দলের মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখও। সেই থেকেই মন্ত্রী ও সভাপতির ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।
মন্ত্রীর দাবি, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করেও পুলিশ পদক্ষেপ করেনি। ফলে থানা ঘেরাও এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই হুঁশিয়ারি তাঁর। মন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শের সঙ্গে এই ধরনের পুলিশি আচরণ যায় না। কাটমানি, মারামারি, দালালি এসব তাঁরা সহ্য করেন না। এদিকে এই ঘটনার সঙ্গে আগের বিতর্কও জড়িয়ে পড়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। মন্ত্রী আইসির নিরপেক্ষতা নেই বলে প্রশ্ন তুলে বলেন, 'কেন এইভাবে খাঁকি পোশাকের ও মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করছেন? আপনি দায়িত্ব পালন করতে না পারলে ছেড়ে দিন। ওই গুন্ডা প্রকৃতির নেতা যা বলছে, তাই আপনি একতরফা ভাবে শুনছেন।' যদিও মন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে পলিশ আধিকারিকরা কিছু বলতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে বিজেপি দলের নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'বাংলার পুলিশমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। তাঁরই এক মন্ত্রী যদি পুলিশকে দোষারোপ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষের ভরসা কোথায় থাকবে?' যদিও এবিষয়ে মুখ খুলতে চাননি পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক দেব টুডু। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসে গোষ্ঠীও নেই, দ্বন্দ্বও নেই। কোথাও কোনও মতবিরোধ থাকতে পারে। সেটাও আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হয়। আর পুলিশ সম্পর্কে কোন প্রেক্ষিতে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এই মন্তব্য করেছেন তা তিনি না জেনে বলতে পারবেন না।
রিপোর্টারঃ সুজাতা মেহেরা