শান্তিনিকেতনের অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত আবাস ভাঙা যাবে না কোনও মতেই। নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বোলপুর পুরসভা। বাড়ির গেটে তালাও ঝুলিয়ে দিয়ে এসেছিল পুরসভা। তবে সে সবের তোয়াক্কা না করেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি। শান্তিনিকেতনের বুক থেকে মুছে ফেলা হল এক ঐতিহ্যবাহী চিহ্ন। তানিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা এলাকা। আর এই বাড়ি ভাঙার ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের উপর তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি।
অবনীন্দ্রনাথ ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো। বীরভূম জেলায় তাঁর বাসভবন ভেঙে ফেলা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বোলপুর পৌরসভা কর্তৃক ভাঙার নির্দেশ না দেওয়া সত্ত্বেও ঐতিহাসিক বাসভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তথ্য অনুসারে, এই বাড়িটি অবনীন্দ্রনাথের পুত্র অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্মাণ করেছিলেন এবং অবনীন্দ্রনাথ কয়েক বছর ধরে এই বাসভবনে থাকতেন।
পরে ঠাকুর পরিবার এই সম্পত্তিটি এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয় যিনি কয়েক মাস আগে এটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বোলপুর প্রশাসন ভাঙন বন্ধ করে দেয় এবং কাঠামোটি না ভাঙার নির্দেশ দেয়। কিন্তু গত রবিবার এই বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়। এই তথ্য পাওয়ার পর পুরসভা ভাঙন বন্ধ করার চেষ্টা করে কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
এখন বিজেপি এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে তৃণমূলের উপর তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য তার X-তে পোস্টে বাংলার প্রশাসনের উপর আক্রমণ শানিয়ে দাবি করেছেন যে, "এটি কেবল একটি কাঠামোর উপর আক্রমণ নয়। এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং হিন্দু সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উপর আক্রমণ। জেগে ওঠার সময় এসেছে। যদি হিন্দু বাঙালির সংস্কৃতি রক্ষা এবং উদযাপনের জন্য তৈরি করা ভূমিতেই এমনটি ঘটে, তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কী বার্তা পাঠাচ্ছি?
বস্তুত, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার ঘটনায় মমতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা একের পর এক পোস্ট শুরু করেছেন। শুধু অমিত মালব্যই নন, রাজ্য বিজেপি সভাপতিও এই ভাঙনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং মমতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে অবমাননা করার অভিযোগ করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন, "শান্তিনিকেতনে বিশ্ববরেণ্য চিত্র শিল্পী এবং বিশিষ্ট লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভেঙে ফেলা হলো। এই চূড়ান্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা শুধুমাত্র একজন শিল্পীর স্মৃতি ধ্বংস করে দেওয়া নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক চেতনার উপর আঘাত! ইনিই হলেন সেই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাঁর অঙ্কিত ‘ভারতমাতা’র চিত্র যা আমাদের জাতীয় পরিচয়কে রূপদান করেছিল। তিনি স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী শিল্পকলার অন্যতম পথপ্রদর্শক।"
সুকান্ত আরও লিখেছেন, "আজ তাঁর বসতবাড়ি "আবাস" - কে গায়ের জোর দেখিয়ে ধ্বংস করা হলো। এই বাড়িটি তাঁর পুত্র কিনেছিলেন, যেখানে তিনি বাস করতেন, সেই জায়গা “অবনপল্লি” নামে পরিচিত হয়েছিল তা আজ ভাঙা হলো নির্বিকারভাবে।এটা কি নিছকই একটি বাড়ি ভাঙা? না, এটা ইতিহাসকে ধ্বংস করা, একটি স্মৃতিকে অপমান করা, সর্বোপরি বাঙালি জাতিসত্ত্বার আত্মপরিচয় মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা।যে পশ্চিমবঙ্গ একদিন ভারত কেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় হিন্দু বাঙালির সম্ভ্রম, সংস্কৃতি রক্ষার জন্য তৈরি করেছিলেন, সেই পশ্চিমবঙ্গেই আজ হিন্দু সাংস্কৃতিক গর্ব ক্রমশ ধূলিসাৎ করা হচ্ছে।এই অমার্জনীয় ঘটনা শুধু লজ্জাজনকই নয় সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অপমানজনক। সংস্কৃতিপ্রেমী, শিক্ষিত বাঙালি সমাজের প্রত্যেকের জেগে ওঠার সময় এখনই — নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একদিন শুধুই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাবে।"
অন্যদিকে, বোলপুর পুরসভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ভাঙনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং এটি আর ভাঙতে দেবেন না। উল্লেখ্য, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু চিত্রশিল্পী নন, সাহিত্যজগতেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। ‘রাজকাহিনী’, ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘নালক’, ‘ভারত শিল্প’, ও ‘শকুন্তলা’ সহ তাঁর রচনাগুলি আজও পাঠকের কাছে সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও সমাদৃত। ফলে তাঁর স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ভেঙে ফেলায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। জানা যাচ্ছে শান্তি